হিল ভয়েস, ১৬ জুলাই ২০২৫, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের প্রতিনিধি মনিরা ত্রিপুরা বাংলাদেশের আদিবাসীদের স্বীকৃতির প্রতি সমর্থনদানের জন্য আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক এক্সপার্ট মেনানিজমকে (এমরিপ) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (এনএইচআরসি) সম্পৃক্ত করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এজেন্ডা “আইটেম ৮: ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আঞ্চলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বিষয়ে প্যানেল আলোচনা” বিষয়ে মনিরা ত্রিপুরা তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
গত সোমবার (১৪ জুলাই) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ে এমরিপের ১৮তম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনটি আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অগাস্টিনা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের মনিরা ত্রিপুরা ও টনি চরান এমরিপের এই ১৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন।
মনিরা ত্রিপুরা তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসমূহ আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও তার ব্যতিক্রম নয়। আমি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাথে এক্সপার্ট মেকানিজমের সম্পৃক্ততাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
বাংলাদেশের সংবিধান আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে না। সংবিধান তাদেরকে “উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা আদিবাসীরা গ্রহণ করেনি।
আদিবাসী জনগণ কেবল আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃত হয়নি তাই নয়, সংবিধানে তাদেরকে জাতি হিসেবে বাঙালি বলে অভিহিত করা হয়। তবে আদিবাসী জনগণ বাঙালি নয়। তাদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও জাতিগত পরিচয় রয়েছে।
তবে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, সেখানে সরকারিভাবে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও তাদের অধিকার স্বীকৃতি প্রদানের একটি সুযোগ রয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই স্বীকৃতিকে সমর্থন প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে বর্তমানে চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই মুহূর্তে সক্রিয় নয়। গত বছরের নভেম্বরে ইহার পূর্ববর্তী মেয়াদ শেষ হলেও, এখনো পর্যন্ত কমিশনটি পুনর্গঠন করা হয়নি। তবে সরকার শীঘ্রই একটি নতুন মানবাধিকার কমিশন গঠন করা অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে ৫৪টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। আদিবাসী হিসেবে সরকারি স্বীকৃতির অভাবে তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, প্রথা ও ঐতিহ্য বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
অবশেষে মনিরা ত্রিপুরা বাংলাদেশের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, স্বশাসন, ভূমি, ভূখন্ড ও প্রাকৃতিক সম্পদ এর স্বীকৃতিকে সমর্থনদানের জন্য এমরিপ’কে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রে সন্নিবেশিত স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতির অধিকার এবং সাংস্কৃতিক অধিকারের সুরক্ষার জন্য সমর্থন প্রদানের আহ্বান জানান।