হিল ভয়েস ১৪ আগস্ট ২০২৫,রাঙ্গামাটি: আজ ( বৃহস্পতিবার) চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হোন স্লোগানকে সামনে রেখে জেএসএস থানা কার্যালয়ে পিসিপি বরকল থানা শাখার ২৩ তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত সম্মলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য বিধান চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, বরকল থানা শাখার সভাপতি জ্ঞান জ্যোতি চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুনীতি বিকাশ চাকমা প্রমূখ।
প্রধান অতিথি বিধান চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সংগঠনের জম্ম এমনি এমনি হয়নি। ১৯৮৯ সালের লংগদু গণহত্যার মধ্যে দিয়েই এই সংগঠনের জম্ম এবং আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্রদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্লাটফর্ম।
তিনি আরো বলেন , বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে রাজনৈতিক অস্তিরতা বিরাজমান। পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যার সমাধানে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ২৮ বছরে অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে এখনো এই মৌলিক ধারার বাস্তবায়ন হয়নি বরং রাষ্ট্রযন্ত্র নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এই বাস্তবতা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে জুম্ম জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে তরুণ সমাজ। সেজন্য শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিশ্বজনীন জ্ঞানে জ্ঞানী হতে হবে। তিনি পিসিপি কর্মীদের জাতির ইতিহাস,ঐতিহ্য, কৃষ্টি তথা অস্তিত্ব রক্ষায় নিজেকে সৎভাবে নিয়োজিত করার পরামর্শ দেন।
যুব সমিতির বরকল থানা কমিটির সভাপতি জ্ঞান জ্যোতি চাকমা বলেন, ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে সেটেলার চক্র লংগদুতে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিল। আর তারই প্রতিবাদ করতে গিয়ে পিসিপির জন্ম। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেবলমাত্র সংগঠন নয় এটি একটি পাঠশালা। আমি মনে করি এই সংগঠনে যুক্ত হওয়া মানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে জেনে, বুঝে জাতির সেবায় নিজেকে সঁপে দেওয়া।
পিসিপি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, জুম্ম জনগণের ভাগ্য কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। আজ আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ, সেনা নিপীড়ন, নারীদের শ্লীলতাহানি ও অনিরাপত্তাসহ নানা ধরণের অসহনীয় অত্যাচারের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান তরুণ সমাজ অনেকক্ষেত্রে অগ্রগামী। তারা অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক বাস্তবতা বুঝে। কিন্তু সংগ্রামের প্রক্রিয়াকে বুঝতে গেলে তাদের অধিকতর অধ্যয়ন করতে হবে। মহান পার্টি জনসংহতি সমিতি কী চায়, তার আন্দোলনের রুপ কীরকম এসব বুঝতে হবে। নাহলে তারা দিশাহারা হয়ে বিভেদপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িয়ে পরবে। আজকে জুম্ম তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা মাদকাসক্ত হয়ে অন্ধকার জগতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটা জাতির জন্য এক অশনিসংকেত। তাই মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে পিসিপির কর্মীদের সোচ্চার হতে হবে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আজকে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে মিনি কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। ব্যাপক হারে সামরিক উপস্থিতি এ অঞ্চলের গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামোকে বিকশিত হতে দিচ্ছে না। যার কারণে পার্বত্য সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এখন তরুণ সমাজের সামনে বিরাট একটা প্রশ্ন। তারা কি এই জটিল পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে বেড়াবে নাকি অস্তিত্বের তরে সুসংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলবে। তরুণ সমাজকে বাস্তবতা মূল্যায়ন করে চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনের সামিল হতে হবে।
পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুনীতি বিকাশ চাকমা বলেন, একটি সংগঠনের সাংগঠনিক গতিশীলতা এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম জোরদারকরণের লক্ষ্যে নেতৃত্বের পালাবদল ঘটে। শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয় এবং নতুন কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়। তার ধারাবাহিকতায় সকল প্রকার দৌদ্যুল্যমানতা, আত্মমূখিনতা চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে বরকল থানা শাখা অংশগ্রহণ জোরদার করবে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিজাতীয় শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণের শিকার হয়ে জাতীয় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বারংবার বঞ্চনা, শোষণ, প্রবঞ্চনা ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে জুম্ম জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। কাজেই এমনতর পরিস্থিতিতে মুক্তির নেশায় মত্ত তরুণেরা ঘুমিয়ে থাকতে পারেনা। তাদের অবশ্যই চূড়ান্ত সংগ্রামকেই আলিঙ্গন করতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে ইলেন চাকমাকে সভাপতি, নিশান তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক , রিন্টু চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপি বরকল থানা কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।