বরকলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠিত

হিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২৫, বরকল: পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বরকল থানা শাখার উদ্যোগে আজ ২ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং রোজ মঙ্গলবার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বরকলের উপজেলা মাঠ প্রাঙ্গনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য বিধান চাকমা, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য শ্যাম রতন চাকমা, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বড় হরিনা ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিলাময় চাকমা, কার্বারী অ্যাসোসিয়েশন বরকল উপজেলা কমিটির সভাপতি নন্দ বিকাশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির বরকল থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুচরিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক পায়া ম্রো প্রমুখ।

সমাবেশে বিধান চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আগের সময় হতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চুক্তি হওয়ার পরের সময়ে কোন সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের প্রতি সুদৃষ্টি দেয়নি। কোন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকারের লক্ষ্যে কোনো কাজ করেনি। বরং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের উপর নানাভাবে দমন-পীড়ন চালানো হয়। বাংলাদেশের কোন সরকার চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়নের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি।

শ্যাম রতন চাকমা বলেন, বর্তমানে শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামকে নাজেহাল অবস্থায় রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত রাখার জন্য সেটেলার বাঙালিরা প্রতিনিয়ত পায়তারা চালাচ্ছে। চুক্তি হওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম পার্বত্য অঞ্চলে এবার হয়তো শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু চুক্তি হওয়ার পরে দেখতে পায় শাসনগোষ্ঠীর সেই বিমাতাসুলভ আচরণ। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হওয়ার আগে যেভাবে লড়াই সংগ্রাম করে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে ঠিক তেমনিভাবে লড়াই সংগ্রাম করতে হবে।

সুমন চাকমা বলেন, ১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাঁধের ফলে ৫৪ হাজার ধান্যজমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কাপ্তাই বাঁধ হলো জুম্ম জনগনের মরন ফাঁদ। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা মনে করেছিলাম জুম্ম জনগণের ভাগ্য হয়তো পাল্টে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের সাথে সরকার বিমতাসুলভ আচরণ করেছে।

তিনি আরো বলেন, অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার ছিনিয়ে আনতে হয়। তাই আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অধিকার আদায় করতে হবে। প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারকামী জুম্ম জনগণকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যায়িত করে। জুম্মরা কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করেনি। শাসকগোষ্ঠীর মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জুম্ম জনগণকে নানা কায়দায় ধর্মান্তরিত করণের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে যা জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। তাই জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

বিশেষ অতিথি নিলাময় চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২৮ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমগ্র জুম্ম জনগনকে অধিকতর আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

নন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, জুম্ম জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের কঠোর থেকে কঠোরভাবে লড়াই সংগ্রাম করতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারনে পাহাড়ে এখনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান। জুম্ম জনগনের অস্তিত্ব রক্ষার্থে মহান পার্টির আহ্বানে সাড়া দিতে হবে।

কবিতা চাকমা বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরেও যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুম্মরা এখনো নিরাপদে বাঁচার অধিকার লাভ করেনি। বহিরাগত সেটেলার বাঙালিরা পার্বত্য চুক্তিকে নস্যাৎ করে দিতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়েও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও সেটেলার বাঙালিরা যে অপতৎপরতা চালিয়েছে তা চুক্তি বিরোধী কার্যক্রমের অংশ। এছাড়া চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে ইউপিডিএফ চুক্তির বিরোধীতা করে চলেছে। জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে চুক্তি বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে।

পায়া ম্রো বলেন, সরকার চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না করায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট এখনো কাটেনি। শাসনগোষ্ঠী দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের শাসন করছে। জুম্ম জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে দিতে শাসকগোষ্ঠীর অপচেষ্টা এখনো বিরাজমান।

ইলেন চাকমা বলেন, আজ থেকে ২৮ বছর আগে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির সাথে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা এখনো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়নি। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ অবধি শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়নের উত্তরণ ঘটেনি। অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের সকলকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বরকল থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিশান তালুকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বরকল থানা শাখার সভাপতি ইলেন চাকমা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি বরকল থানা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক জিতেশ চাকমা।

More From Author