পিসিপি বিলাইছড়ি থানা শাখার ২১তম শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন

হিল ভয়েস, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বিলাইছড়ি থানা শাখার ২১তম শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর ২০২৫) বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত সম্মেলন ও কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য টিপু চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জিকো চাকমা, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক করুণ জ্যোতি চাকমা প্রমুখ।

এছাড়াও উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকার ছাত্র ও যুব সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এই সময় টিপু চাকমা বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক নিপীড়িত জুম্ম জনগণের হাতিয়ার হিসেবে পিসিপিকেই সর্বাগ্রে রুখে দাঁড়াতে হবে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তথা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের লড়াইকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক জুম্ম ছাত্র ও যুবক বিপথে পরিচালিত হচ্ছে। অনেকেই শাসকগোষ্ঠীর পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে, কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে নিজেদের ও জাতীয় ভবিষ্যৎ সংকটে ফেলছে। সেই তরুণদের নিকট আলোর দিশারী হয়ে মুক্তি ও প্রগতির বার্তা নিয়ে পিসিপিকেই পৌঁছাতে হবে। পিসিপির প্রত্যেকটা কর্মীকে দায়িত্ববান হয়ে জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।

জিকো চাকমা বলেন, নব্বই দশকের বিপ্লবীপনা ইতিহাস পিসিপির কর্মীদের জন্য পাথেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমান বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ছাত্র ও যুব সমাজকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল করতে মহান পার্টির বার্তা প্রচার ও প্রসারে পিসিপিকেই গুরু দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দূর্বল ছোট ছোট জাতিসমূহ বরাবরই বিজাতীয় শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বলি হয়। কিন্তু যে জাতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনো বিপ্লবী পার্টি কিংবা চেতনা বিরাজমান থাকে তারা টিকে থাকে। তারা লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে স্বকীয় অস্তিত্ব ও অধিকার সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়।

তিনি আরো বলেন, পার্টির বর্তমান লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বৃহত্তর আন্দোলন সুসংগঠিত করে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নিশ্চিত করা। কাজেই ছাত্র ও যুব সমাজকে পার্টির আহ্বানকে উপলব্ধি করতে হবে। নব্বই দশকের ঐতিহাসিক বাস্তবতা আরেকবার প্রাসঙ্গিকতায় এসেছে। তাই ছাত্র-যুব সমাজকে লৌহ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

করুণ জ্যোতি চাকমা বলেন, প্রকৃতঅর্থে জুম্ম জনগণকে প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন মহান পার্টি জেএসএস ও জুম্ম ছাত্র সমাজকে প্রতিনিধিত্বকারী পিসিপি’র জন্মলাভ এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা। যুগের পর যুগ বিজাতীয় শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণে নিষ্পেষিত ও পশ্চাদপদ চিন্তায় নিমজ্জিত জুম্ম জনপদে মুক্তি ও প্রগতির বার্তা নিয়ে মহান পার্টির আবির্ভাব। সেসময়কার শিক্ষিত ছাত্র সমাজ এম এন লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচে-কানাচে মুক্তি ও পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলো।

তিনি আরো বলেন, মহান পার্টির নেতৃত্বে ছাত্র-সমাজ তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্বকে কাঁধে নিয়ে জীবন-যৌবন ত্যাগ করে বিপ্লব সাধনের মহাযজ্ঞে সামিল হয়। এই ইতিহাস নিয়ে বর্তমানে আমরা গর্ববোধ করি। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক বাস্তবতায় আমাদের দায়-দায়িত্ব আরো বেশি হয়ে গেছে। নব্বই দশকের ঐতিহাসিক লড়াই-সংগ্রামের ফসল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। সেই চুক্তির ২৮ টা বছর অবলীলায় চলে গেছে। জুম্মদের জাতীয় জীবন থেকে হারিয়ে গেছে দুই যুগেরও বেশি সময়। আজকে পাহাড়ে আরেকবার সর্বাত্মক প্রতিরোধ পর্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।

পিসিপি বিলাইছড়ি থানা শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি নিকেল চাকমার সভাপতিত্বে সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন একই কমিটির সহ-সভাপতি খুলা বাবু তঞ্চঙ্গ্যাঁ এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাসেল মারমা।

সম্মেল শেষে নিকেল চাকমাকে সভাপতি ও দ্বীপ উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যাঁকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট বিলাইছড়ি থানা শাখা কমিটি নির্বাচিত করা হয়। নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জিকো চাকমা।

More From Author