পাহাড়ের মানুষকে দূরে ঠেলে দেবেন না, চুক্তি বাস্তবায়ন করছি শুধু মুখে বললে হবে না- চট্টগ্রামে ঊষাতন তালুকদার

0
263

হিল ভয়েস, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, চট্টগ্রাম: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সুবর্ণ জয়ন্তী ও ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, পাহাড়ের মানুষকে দূরে ঠেলে দেবেন না, তাদেরকে বুকে আগলে ধরে রাখুন। আর চুক্তি বাস্তবায়ন করছি, সেটা শুধু মুখে বললে হবে না, তার বাস্তবিক প্রয়োগ করতে হবে।

আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রামের জে এম সেন হলে জনসংহতি সমিতির সুবর্ণ জয়ন্তী ও ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভার সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রী ঊষাতন তালুকদার এসব কথা বলেন।

‘জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নই পাহাড়ে শান্তি ও সুষম উন্নয়নের একমাত্র উপায়’ এই প্রতিপাদ্যকে নিয়ে আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় সম্মানিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম এর সভাপতি কমরেড অশোক সাহা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড় ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার চৌধুরী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন বাদল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), চট্টগ্রাম এর নেতা আল কাদেরী জয়, ঐক্য ন্যাপ, চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ প্রমুখ।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিশান তঞ্চঙ্গ্যা এবং সঞ্চালনা করেন অনিল বিকাশ চাকমা।

জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি অশান্ত থাকে, এই বাংলা শান্ত থাকতে পারে না। তাই আসুন আমাদের এই অধিকারের আন্দোলনে বাংলার ষোল কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করি। আপনারা পাহাড়ের মানুষকে দূরে ঠেলে দেবেন না তাদেরকে বুকে আগলিয়ে ধরে রাখতে হবে। তারা বেশি কিছু চায় না। তারা নিজ ভূমিতে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। এই জুম্ম জনগণের বেঁচে থাকার রাস্তা যেন বন্ধ করে দেওয়া না হয়। আর কোন বিলম্ব, কালক্ষপেণ নয়, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আপনারা সকলেই আন্তরিক হয়ে এগিয়ে আসুন।

শ্রী ঊষাতন তালুকদার আরো বলেন, ‘উদ্দেশ্য-লক্ষ্য পরিপূরণের হাতিয়ার সংগঠন। সংগঠনের মধ্য দিয়ে কোনো দল তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই ১৯৭২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইতিহাসের দাবিতে এবং বাস্তবতার কারণে এই দল গঠিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশভাগ, কাপ্তাই বাঁধ, সংবিধানে বাঙালিকরণের মতো ক্ষত জুম্ম জনগণকে জর্জরিত করেছিল। অধিকারহীন এই জনগোষ্ঠীকে মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচানোর জন্য এম এন লারমারা এগিয়ে এসেছিলেন। দীর্ঘ দুই যুগের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হলো ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আজ ২৫ বছর পরও স্বয়ং যে সরকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে সেই সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করে নাই। আইন-শৃঙ্খলা, বনবিভাগ, ভূমি অধিকার, শরণার্থী পুনর্বাসন দেওয়া হয় নাই। শুধু চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি তা মুখে বললে হবে না, বাস্তবে কী হয়েছে সেটা সাধারণ জনগণ বুঝে। এজন্য আন্তরিকতা সাথে এগিয়ে আসতে হবে।

শ্রী তালুকদার আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। নিরাপত্তাহীনতায় জুম্মরা নিজ ভূমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা, সেটা সরকারও স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এই সমস্যা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধান করা সময়ের দাবি। একমাত্র পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব। যতক্ষণ না দেশের সচেতন নাগরিক এগিয়ে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে-আমাকে এই চুক্তির গুরুত্ব বুঝাতে হবে। আজকে এই সরকার পাহাড়ি মানুষকে কেন শত্রু মনে করে?

উল্লেখ্য, জাতীয় সংগীত ও জনসংহতি সমিতির দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল আলোচনা সভা শুরু করা হয়। এসময় জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।

আলোচনা সভা শেষে রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক আয়োজিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সুবর্ণ জয়ন্তী ও ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।