পাহাড়ের এক বিপ্লবী নারী: কল্পনা চাকমা

সোহেল তঞ্চঙ্গ্যা

শাসক গোষ্ঠীর উৎপীড়ন যখনি তীব্রতর হয় তখন এর প্রতিরোধ করা নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাসে নিপীড়িত মানুষের প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে মূর্ত করার উদ্দেশ্যে বারংবার শাসক গোষ্ঠীর চোখে চোখ রাঙিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ গড়ে তুলতে জন্ম হয় বিপ্লবীদের, সংগ্রামী মানুষের। আর জুম পাহাড়ের ইতিহাসে তেমনি এক সংগ্রামী নারীর নাম কল্পনা চাকমা। যুগ যুগ ধরে চলমান শাসক গোষ্ঠীর শোষণের যাঁতাকলে আষ্টেপৃষ্টে বাধা পাহাড় তথা সমগ্র নারীদের মুক্তির তরে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন এই জুম্ম নারী।

আজ কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৯ বছর। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন মধ্যরাতে আনুমানিক ১:৩০ ঘটিকা হতে ২:০০ ঘটিকার সময়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউলাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে একদল চিহ্নিত সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কর্তৃক নির্মমভাবে পাশবিক কায়দায় অপহরণের শিকার হন তিনি। কিন্তু অপহরণের ২৯ বছর পার হয়ে গেলেও কল্পনা চাকমার হদিস জুম্ম জনগণকে দিতে ব্যর্থ এই রাষ্ট্রযন্ত্র। তাহলে কি আজও কল্পনা চাকমা বেঁচে থাকবেন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের স্মারকচিহ্ন হিসেবে?

কে এই কল্পনা চাকমা?

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রাম। ১ মে ১৯৭৬ পিতা গুণরঞ্জন চাকমা ও মাতা বাঁধুনি চাকমার কোলে জন্ম নেয় এক শিশু, নাম হয় তার কল্পনা। পাঁচ সন্তানের মধ্যে কল্পনা সবার ছোট। দারিদ্রের মধ্যে বড় হতে থাকলেও রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন, বৈষম্য, নারীর প্রতি প্রচলিত সমাজ ও ধর্মীয় অবজ্ঞা, জাতিগত নিপীড়ন-নির্যাতন এসব কিছু তাঁর চোখ এড়িয়ে যেতে পারেনি। ১৯৯১ সালে কল্পনা চাকমা বাঘাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং ডিগ্রি কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। অপহৃত হওয়ার আগ পর্যন্ত ২৩ বছর বয়সী কল্পনা কাচালং ডিগ্রি কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সেই সময়কার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীদের একমাত্র ছাত্রী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যাত্রাপথ শুরু হলেও পরবর্তীতে তা পাহাড়ের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখনকার সময়ে পাহাড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন কল্পনার চেতনাকে সংগ্রামের দিকে শাণিত করে। শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের উপর দমন-পীড়ন, নিপীড়ন-নির্যাতন কল্পনাকে আরও বেশি সংগ্রামী করে তোলে।
যার কারণে এসএসসি পাস করার পর তিনি সরাসরি হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দিয়ে তিনি পাহাড়ের জুম্ম নারীদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দায়িত্বে উন্নীত হন। তিনি হিল উইমেন্স ফেডারেশনকে সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যারিকেডের মঞ্চ রূপে দেখতেন।
প্রতিবাদী স্বভাবের কারণেই কল্পনা চাকমা খুব সহজে শাসক-শোষক ও নিপীড়ক গোষ্ঠীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। তবে তাদের চোখ রাঙানিতে তিনি কখনো হতোদ্যম হয়ে পড়েননি। তার প্রমাণ পাওয়া যায়, লাল্যাঘোনা গ্রামে ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ রাতের আধাঁরে পাহাড়িদের কয়েকটি বাড়িতে সেটেলার বাঙালিরা আগুন ধরিয়ে দেয়ার প্রতিবাদের মিছিলে কল্পনা সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কজইছড়ি ক্যাম্পের এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর তীব্র আকারে বাক্য বিনিময় হয়।

কল্পনা চাকমার অপহরণ

কল্পনার সেই সময়কার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর শাসকগোষ্ঠীর কাছে এক আতঙ্কের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই তার কণ্ঠকে রুদ্ধ করার জন্য বাঘাইছড়ির কজইছড়ির সেনা (১৭ ই.বি.রেজি.) ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার লে. ফেরদৌস কায়ছার খান, ভিডিপি’র পিসি নুরুল হক ও ভিডিপি সদস্য সালেহ আহমেদের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন মধ্যরাতে ১০-১২ জনের পরিচিত-অপরিচিত সশস্ত্র সেনা-ভিডিপি’র সদস্য কর্তৃক ২৩ বছর বয়সী নারী নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্র ও প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য প্রমাণ মোতাবেক, অপহরণকারীরা সেইদিন তাদের বাড়ির দরজা ভেঙে কল্পনা চাকমাসহ তার দুই বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা (কালীচরণ) ও লাল বিহারী চাকমা (ক্ষুদিরাম)কে ঘুম থেকে তুলে এনে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে। এসময় চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকলেও, টর্চের সামান্য আলোর ঝলকে অপহরণকারীদের কারো কারো মুখমন্ডল দেখাও যাচ্ছিল। তাদের কেউ পুরোপুরি, কেউবা অর্ধেক গামছা বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা। একসময় চোখ বেঁধে কল্পনা চাকমা ও তার দুই ভাইকে আলাদা করে এবং কল্পনা চাকমাকে একদিকে নিয়ে যেতে থাকে। কিছুক্ষণ পর কল্পনা চাকমার উদ্বিগ্ন ‘দাদা..দাদা..’ ডাক শুনতে পায় কল্পনার ভাইয়েরা এবং সেটাই ছিল ভাইদের কাছে তাদের প্রিয় একমাত্র বোনের শেষ কন্ঠস্বর। যে কন্ঠস্বর তারা এখনও ভুলতে পারেনি। এক পর্যায়ে কল্পনার ভাইয়েরা গুলির শব্দ শুনতে পান। এরপর অপহরণকারীরা কল্পনার দুই বড় ভাইকেও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। তবে তারা গুলির করার সংকেত পাওয়ার সাথে সাথেই জীবন পণ করে পালিয়ে কোনমতে বাঁচতে সক্ষম হন।

অতপর ভোর হওয়ার সাথে সাথে সর্বত্র জায়গায় কল্পনার খোঁজখবর নিয়েও কোন হদিশ না পাওয়ায় কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা স্থানীয় মুরুব্বি সম্রাটসুর চাকমা ও ইউপি চেয়ারম্যান দীপ্তিমান চাকমার কাছে গিয়ে বিষয়টি জানান। এরপর তাদেরকে সাথে নিয়ে কালিন্দী কুমার চাকমা বাঘাইছড়ির টিএনও’র (বর্তমানে ইউএনও) নিকট গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন এবং থানায় মামলা নং ২, তারিখ ১২/০৬/৯৬, ধারা ৩৬৪ দ: বি: হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
উল্লেখ্য, কল্পনা চাকমার বড় ভাইরা আগে থেকেই লেঃ ফেরদৌস এবং নুরুল হক ও সালেহ আহম্মদকে চিনতেন। কজইছড়ি সেনাক্যাম্পের দূরত্ব কল্পনা চাকমাদের বাড়ি থেকে বড় জোর একশ থেকে দুইশ গজের মধ্যে। অপরদিকে নুরুল হক ও সালেহ আহম্মদদের বাড়িও কল্পনা চাকমাদের বাড়ি থেকে বেশি দূরের নয়। ফলে রাতের অন্ধকারে সামান্য আলোতেও কল্পনার ভাইয়েরা সুস্পষ্টভাবে অপহরণকারী তিন জনকে চিনতে সক্ষম হন।
অপহরণ ঘটনার পরদিন সকালে কল্পনার ভাইয়েরা সেসময় ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা এবং গুলি রাখার বেন্ডলি (কোমর বন্ধনী) খুঁজে পান এবং পরবর্তীতে প্রশাসনের নিকট জমা দেন।

মামলার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া

কল্পনা চাকমার অপহরণ হওয়ার পর কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাঘাইছড়ি থানায় মামলা দায়ের করার নথিভুক্ত হওয়ার প্রায় ১৪ বছর সময় প্রশাসন কতৃর্ক বিভিন্ন গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন কতৃর্ক চাপ প্রয়োগের এক পর্যায়ে ২০১০ সালের ২১ মে ঘটনার বিষয়ে পুলিশের চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হলেও সেই রিপোর্টে অভিযুক্ত ও প্রকৃত দোষীদের সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়। এরপর সিআইডি ও পুলিশের ৩৯ জন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কেউই যথাযথ তদন্ত সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন এবং এমনকি কল্পনার হদিশ দিতে ও দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হন। এরপর গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ রাঙ্গামাটির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগম মুক্তা কর্তৃক পাহাড়ের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটি খারিজের আদেশ দেওয়া হয়। যাতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট ব্যর্থতা প্রকাশ পায়।
আরো উল্লেখ্য যে, কল্পনা চাকমার অপহরণের ঘটনার প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে ২৭ জুন ১৯৯৬ বাঘাইছড়িসহ রাঙ্গামাটি জেলায় অর্ধদিবস সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। দাবি একটি, ‘কল্পনা চাকমার মুক্তি চাই এবং অপরাধীদের শাস্তি চাই’। অতপর শান্তিপূর্ণ এই অবরোধ চলাকালে আবারও বাঘাইছড়ি সেনা কর্তৃপক্ষের মদদে স্থানীয় ভিডিপি ও সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক হামলায় বাবুপাড়া ও মুসলিম ব্লক এলাকায় গুলি করে রূপন চাকমাকে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুকেশ চাকমা, মনোতোষ চাকমা ও সমর বিজয় চাকমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই চারজনকে হত্যার ঘটনা দিবালোকে প্রকাশ্যে পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে ঘটে। কিন্তু পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করেনি বা করতে পারেনি। এই পর্যন্ত গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানা যায়নি।

পাহাড়ের পরিস্থিতি ও তরুণদের করণীয়

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান এবং পার্বত্য অধিবাসীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তির ধারাসমূহ যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে সেটেলার বাঙালি ও এখানকার স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা বহু জুম্ম নারী যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এসব ঘটনার যথাযথ বিচার না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারীদের চরম নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতার চিত্র দিন দিন ফুটে উঠছে। বস্তুত কল্পনা চাকমা অপহরণের উপর চলমান তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া এ দেশের অন্যায়-অবিচার ও অপরাধের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই অত্যন্ত তীব্ররূপে এবং জাতিগত সংখ্যালঘু আদিবাসীদের চরমভাবে নিপীড়ন এবং বৈষম্যকে উন্মোচিত করে তুলছে যা এই দেশের স্বাধীনতা চেতনার বিরুদ্ধ আচরণ।

পাহাড়ের মানুষ আশা করেছিল, জুলাই অভ্যূত্থান পরবর্তী ক্ষমতাসীন নয়া অন্তবতীর্কালীন সরকার হয়তো পাহাড়ের মানুষ তথা আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার কিন্তু বিগত সরকার গুলোর অনুরূপ বর্তমান সরকার সরকারও বর্তমানে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং ভূমি ও মৌলিক অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনরত ব্যক্তি ও সংগঠনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্যদেরকে ‘সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আখ্যা দিয়ে চুক্তি-পূর্বেকার সময়ের মতো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, ধর-পাকড়, ঘরবাড়ি তল্লাসী, ক্যাম্পে নিয়ে মারধর, জেলে প্রেরণ, জুম্ম নারীদের ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা ইত্যাদি দমন-পীড়নমূলক জঘন্য কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফলে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ এক শ্বাসরুদ্ধকর নিরাপত্তাহীন মানবেতর জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হচ্ছে।

কল্পনা চাকমা অপহরণ একটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বহুল আলোচিত ঘটনা। এটি যেমন একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়, তেমনি রয়েছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন, সুবিচারের প্রশ্ন, অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের প্রশ্ন এবং সরকার, রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর কলঙ্ক উন্মোচনের প্রশ্ন। এটি সত্য যে, কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার আজ ২৯ বছর হলেও এই রাষ্ট্র কল্পনা চাকমার হদিশ দিতে এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
শাসক গোষ্ঠী কতৃর্ক রাষ্ট্রীয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ও শাসনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের ফলস্বরূপ হিসেবে পাহাড়ের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বলাবাহুল্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত আগ্রাসন, নিপীড়ন-নিযার্তনের অন্যতম দিক হচ্ছে জুম্ম নারীর উপর চলমান সহিংসতার কার্যক্রম। কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা তারই এক চাক্ষুষ প্রমাণ। এটি পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং দেশের সকল আদিবাসী নারীদের উপর নিযার্তন, নিপীড়ন ও সহিংসতার এক জ্বলন্ত প্রতীক।

কল্পনা চাকমা হয়তো আজ পাহাড়ের মাঝে নেই। রাষ্ট্রযন্ত্র তাঁকে রাতের আঁধারে অপহরণ করে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠকে রোধ করার প্রচেষ্টা করেছিল ঠিক কিন্তু কল্পনার সেই প্রতিবাদী কন্ঠস্বর আজও পাহাড়ের জুম্ম নারীদের মধ্যে প্রতিবাদী ধ্বনি রূপে সঞ্চারিত হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই মানুষ যারা প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য আপোষহীন ও নির্ভীক হয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে কল্পনা চাকমাও একজন হয়ে জুম্মদের এবং নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের কন্ঠে বারংবার উচ্চারিত হবেন। আজও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে মিছিল-শ্লোগানের কল্পনা চাকমা জাজ্জ্বল্যমান। পাহাড়ে তারুণ্য চিন্তার সাথে কল্পনার সেই প্রগতিমনা চিন্তার উন্মেষ প্রতিফলন এখন সময়ের দাবি।

More From Author