পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন-গুম ও চাঁদাবাজির জন্য নিরাপত্তার ইজারাদাররা দায়ী হবে না কেন?

0
595

অংম্রান্ট অং

নিরাপত্তার ইজারাদার সেনাবাহিনী এবং তাদের সুবিধাভোগী সাঙ্গপাঙ্গরা বলে আসছে, “জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য নিরাপত্তার ইজারাদাররা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত আছে। তাদের নিরাপত্তা বিধানের কারণে পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে আছে। তাদের দমনে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি কমে এসেছে, সন্ত্রাসীরা দূরে সরে গেছে” প্রভৃতি। কিন্তু বাস্তবে পাহাড়ের আদিবাসী মানুষেরা কেমন আছে?

গতকাল ১২ ডিসেম্বর ২০২১ রবিবার সন্ধ্যা ৮.০০টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বান্দরবান জেলা কমিটির সদস্য ও বান্দরবান সদর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পুশৈথোয়াই মারমাকে মগপার্টি নামক দলের (যাদের নেতা উচিংমং খইলাং যে আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) সামরিক শাখার একজন কমাণ্ডার, লোকটি বাংলা ভাষা ও অক্ষর জ্ঞান শূন্য এবং আরাকানী ভাষায় অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন মাত্র) সদস্যরা বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের চেমিডলু পাড়া থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী আমতলী মারমা পাড়ার নিকটে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের পাশে হত্যা করার পর একটি বাগানে মাটিচাপা দিয়ে চলে যায়। জানা গেছে যে, ১২-১৫ জনের মগপার্টির সদস্যরা দুটি মাহিন্দ্র গাড়িতে চেমিডলু পাড়াতে আসে। সেই চেমিডলু পাড়ায় একটি সেনাক্যাম্প রয়েছে। বান্দরবানবাসী সকলেই জানেন, বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক দিয়ে  যাতায়াতকারীরা সেই সেনাক্যাম্পের সামনে আসলে সেনাসদস্যদের দ্বারা ব্যাগ তল্লাশি ও বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হতে হয়। সেনাবাহিনীর তল্লাশী ও নজর এড়িয়ে কেউ ঐ সড়ক দিয়ে যেতে পারে না। কাজেই  মগপার্টির সদস্যরা পুশৈথোয়াই মারমাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ক্যাম্পের সেনাসদস্যরা অবশ্যই জেনে থাকবে। কিন্তু তাঁরা কোনো সক্রিয়তা দেখায়নি অথবা জেনেও না জানার ভান করেছে।

তাছাড়া দুই-তিন মাস পূর্বে কুহালং ইউনিয়নের ক্যমলং পাড়ার ফার্মেসি দোকানদার উগ্য মারমাকে (তিনি রোয়াংছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা চহ্লামং মারমা এর ভগ্নীপতি) মগপার্টির সদস্যরা একই কায়দায় নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডকে নিরাপত্তার ইজারাদাররা অসাধু সাংবাদিকদের মাধ্যমে উগ্য মারমা পিসিজেএসএস এর সদস্য, সে দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগদানের কারণে জেএসএস এর লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে প্রচার চালানোর অপচেষ্টা করে। এই মগপার্টির সদস্যরা এযাবৎ রাজস্থলীর পোয়াইতু পাড়াতে অবস্থান করে বান্দরবানের জামছড়ি, রাজবিলা ইউনিয়নের তাইখালী, রাবার বাগান এলাকা, রাজস্থলী উপজেলার অনেকজনকে অপহরণ ও হত্যা করেছে। তাছাড়া বান্দরবান জেলার বিভিন্ন পাড়া ও রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন পাড়া থেকে লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এবং চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।

মগপার্টি ছাড়াও বান্দরবান শহরে থেকে সেনাবাহিনী ও সরকারি দলের স্থানীয় নেতৃত্বের মদদে ও পৃষ্ঠপোষকতায় জেএসএস সংস্কার এবং ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে সশস্ত্র দুটি দল প্রকাশ্য দিবালোকে যে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে তা সকলেই জানে। এ সমস্ত বিষয় বান্দরবান ও রাজস্থলী উপজেলাবাসী পরিষ্কারভাবে জানলেও সেনাবাহিনীর ভয়ে মুখ খুলে বলতে পারছে না। সাধু সাংবাদিকেরা তাঁদের পত্রিকায় প্রকাশ করতে পারছে না।

পুশৈথোয়াই মারমা এর হত্যাকাণ্ডে কয়েকজন সাংবাদিক সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করলেও পুলিশের সূত্র দিয়েই সংবাদ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। পুশৈথোয়াই মারমাকে মগপার্টি সন্ত্রাসীরা অপহরণ ও হত্যা করার বিষয়টি নির্ভুলভাবে জানার পরও তারা এক যুবক বা এক দল সন্ত্রাসী দ্বারা হয়েছে বলে লিখতে বাধ্য হয়েছে। এর একটি মাত্র কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে  সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত শাসন এবং তাদের সন্ত্রাসবাদী নীতি ও কৌশল।