পার্বত্য চট্টগ্রামে ও টাংগাইলে আদিবাসীদের হত্যা, হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপি ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ

0
553

হিল ভয়েস, ৮ জুলাই ২০২২, ঢাকা: সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে এবং সমতলের টাংগাইলে আদিবাসীদের উপর অব্যাহত হামলা, হত্যা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং হত্যার হুমকির প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছে।

আজ (৮ জুলাই ২০২২) ঢাকার শাহবাগে পিসিপি ও আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সম্প্রতি রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক ৩ জন নিরীহ ত্রিপুরা আদিবাসীকে হত্যা, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ৩৭ টি আদিবাসী পরিবারের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং টাংগাইলের মধুপুরে বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কর্তৃক গারো আদিবাসীদেরকে গুলি করে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্র নাথ সিং, আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত ধামাই, পিসিপি’র ঢাকা মহানগরের সভাপতি রে ইয়ং ম্রো, বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুশ নকরেক, মানবাধিকার কর্মী মাহবুল হক এবং বাংলাদেশ ত্রিপুরা খ্রিস্টান স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন’এর ঢাকা মহানগরের সভাপতি গৌরব ত্রিপুরা প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ এবং সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডন জেত্রা।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা খ্রিস্টান স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন’এর ঢাকা মহানগরের সভাপতি গৌরব ত্রিপুরা বলেন, ‘গত ২১ জুনের ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। চারিদিকে আদিবাসীদের উপর যে নির্যাতন ও হামলা তাতে বেঁচে থাকার উপায় আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।’ তিনি রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, আদিবাসীদের উপর নিপীড়নকারী ও নির্যাতনকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

বিক্ষোভ সমাবেশে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী মাহবুল হক বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ৫৪ টিরও অধিক আদিবাসী বসবাস করছে। যদি সংখ্যায় ১ জনও হয় তাহলেও তার মানবাধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের হয়ে থাকে। কিন্তু রাষ্ট্র সেইসব ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ।

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংসদ (বাগাছাস)’এর কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুশ নকরেক বলেন, ‘মধুপুরে কৃত্রিম লেক খননের কাজ ঘোষণা দেওয়ার পর আমরা কেউ ঘুমাতে পারি না। আমরা ভাবনায় থাকি আগামীকালের সকালটা দেখবো কিনা! রাষ্ট্র নিরাপত্তার বদলে আমাদের উচ্ছেদ করে চলেছে, জুলুম করে চলেছে ।’

হরেন্দ্র নাথ সিং বলেন, ‘আদিবাসীদের উপর শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের ধরনে মধুপুরে রেঞ্জার কর্তৃক প্রকাশ্যে আদিবাসীদের গুলি করে হত্যা করার হুমকি তা মোটেও আশ্চর্যজনক নয়। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী পোশাক পরে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মে আদিবাসীদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে, গুলি করে হত্যা করেছে, কিন্তু ৭ বছর হয়ে গেলো তাদের কোন বিচার করা হয়নি। উল্টো আদিবাসীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। তবে বিচারের দাবিতে আমরাও লড়ে যাব। আজীবন লড়াই চালিয়ে যাব।’

পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেংইয়ং ম্রো বলেন, অতীতে ব্রিটিশরা যেভাবে এখানকার ভারতবর্ষের উপর অন্যায়ভাবে “ভাগ কর, শাসন কর” নীতি প্রয়োগ করেছিল ঠিক একইভাবে বাংলাদেশী শাসকগোষ্ঠীও জুুম্মদের উপর এই নীতি প্রয়োগ করছে। যার ফলস্বরূপ, সম্প্রতি কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র গোষ্ঠীর আবির্ভাব।

তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম তা কোনোভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের শান্তি বয়ে আনবে না। যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা, তাই রাজনৈতিকভাবে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। মধুপুরের আদিবাসীদের যারা প্রকৃতিকে রক্ষা করে জীবন নির্বাহ করেন, তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে কৃত্রিম যে একটা উন্নয়ন, সেখানে বাস্তবায়নের চেষ্টা তা কখনোই আদিবাসীরা মেনে নিবে না।’

আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত ধামাই বলেন, ‘১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি দিনদিন অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যেভাবে একটি স্বাধীন দেশে দিন দুপুরে টাংগাইলের মধুপুরে বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্তৃক সেখানকার আদিবাসীদের হুমকি দেওয়া হয় তা মোটেও কাম্য নয়।’