নারীকে পুরুষতান্ত্রিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে- নারী দিবসে সন্তু লারমা

0
1011

হিল ভয়েস, ৮ মার্চ ২০২১, রাঙ্গামাটি: আজ (৮ মার্চ ২০২১) রাঙ্গামাটিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, নারীকে শুধু রান্নাঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, তার প্রাপ্য অধিকারটুকু বুঝিয়ে নিতে পুরুষতান্ত্রিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে।

আজ সকাল ১০:০০ টায় রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সন্তু লারমা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টি আই বি’র ট্রাস্টি এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত উপ-সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এর সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নান্টু ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিকা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি রিনা চাকমা। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রিতা চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানু মারমা।

আলোচনা সভাটি উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সদস্য জ্যোতিপ্রভা লারমা মিনু।

আলোচনা সভায় সন্তু লারমা আরো বলেন, নারীকে বাদ দিয়ে শুধু পুরুষকে দিয়ে আন্দোলন চলতে পারে না, তা সঠিক আর্দশও হতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজ এখনো শ্রেণি বিভক্ত, যতদিন পর্যন্ত শ্রেণিবিভক্ত সমাজ থাকবে, ততদিন পর্যন্ত নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে না। তাই হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্মীদের আরও সক্রিয় হয়ে কাজ করার আহবান জানান তিনি।

সন্তু লারমা বলেন, কত আশা আকাঙ্খা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে হাহাকার বিরাজ করছে। যার কারণে জুম্ম নারীদের উপর সীমাহীন নির্যাতন ও নিপীড়ন বাড়ছে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ ব্রিটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, পকিস্তান সরকারের মরণফাঁদ কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিল। সে লড়াই আজ অবধি বহাল আছে।

মি: লারমা ৩৩ বছর ধরে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জুম্ম নারী মুক্তি আন্দোলনে যে অবদান ও এখনো যে লড়াই অব্যাহত রেখেছে তার জন্য হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।

আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, নারী মুক্তি আন্দোলন কেবল নারীদের নয়। নারী-পুরুষ উভয়ই সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রেণিহীন সমাজ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাই নারী মুক্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। নারীকে বাদ দিয়ে কোন সমাজ তথা রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী আন্দোলন আজ দৈন্যদশায় দিন কাটাচ্ছে। তাদের উপর সংঘটিত হচ্ছে নির্যাতন-নিপীড়ন। শুধু তাই নয়, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য একের পর এক জুম্ম বিধ্বংসী কার্যক্রম, চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। কেউ তা নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে গুম, খুন করে ফেলা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায জড়ানো হচ্ছে। পর্যটনের নামে জুম্মদের ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। স্থানীয় ম্রোরাসহ দেশ ও বিদেশে প্রবল বিরোধিতা করা সত্ত্বেও চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে ম্রোদের জুমভূমি দখল করে পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এমন উন্নয়ন আমরা কেউ চাই না। জুম্ম উচ্ছেদের উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া বক্তাগণ পার্বত্য সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের স্বার্থে দ্রুত পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।