নাইক্ষ্যংছড়িতে আটককৃত ২ জনকে পুলিশে সোপর্দ, ৪ জনের হদিশ নেই

0
669
ছবিতে মারধর, আটক ও মিথ্যা মামলার শিকার উথোয়াই হ্লা মার্মা ও ম্যানরুম মুরুং

হিল ভয়েস, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়ার কার্বারিসহ ৬ নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক অমানুষিক মারধর ও আটক রাখার চার দিন পর ২ জনকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে, আটককৃত অবশিষ্ট ৪ জনকে কোথায়, কিভাবে রাখা হয়েছে এখনও হদিশ পাওয়া যায়নি।

মিথ্যা মামলায় জড়িত করে পুলিশের নিকট সোপর্দ আটককৃত দুই ব্যক্তি হলেন- উথোয়াই হ্লা মার্মা (২৪), পীং-মংদো মারমা ও ম্যানরুম মুরুং (৬০), পীং- মৃত ধুই থং মুরুং। উথোয়াই হ্লা মার্মার বাড়ি লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নে, তবে স্থানীয় এক মেয়েকে বিয়ে করে বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়া এলাকায় বসবাস করছেন। ম্যানরুম মুরুং এর বাড়ি কামিছড়া চাক পাড়ার পার্শ্ববর্তী স্লোং পাড়া এলাকায়। তিনি একজন নির্বাচিত সাবেক ইউপি সদস্য এবং স্থানীয় মুরুব্বি।

জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র পক্ষ থেকে উথোয়াই হ্লা মার্মা ও ম্যানরুম মুরুং এর বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হয়। দন্ডবিধি ১৪৪, ৩৫৩, ৩৩২, ৩৩৩, ৩০৭ ধারায় এই মামলা করা হয়। মামলায় উক্ত দুই জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা এবং বিজিবি সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণের মত মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়।

এছাড়া, মামলায় উথোয়াই হ্লা মার্মা ও ম্যানরুম মুরুং-কে জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) এর কর্মী বলে উল্লেখ করা হয়, যা মিথ্যা বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জেএসএস নেতা জানান, এটা সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র একটি সাজানো মামলা। তাই তারা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়াভাবে উক্ত দুইজনকে জেএসএস’এর কর্মী বলে উল্লেখ করেছে। বাস্তবে তারা জেএসএস’র কোন পর্যায়ের কমিটির সদস্য নন।

জানা গেছে, মামলার সাথে সাথে বিজিবি সদস্যরা উথোয়াই হ্লা মার্মা ও ম্যানরুম মুরুং-কে নাইক্ষ্যছড়ি থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। পরে নাইক্ষ্যংছড়ি পুলিশ উক্ত দুইজনকে বান্দরবান জেলা জজ আদালতে প্রেরণ করে। পরে তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয় বলে জানা যায়।

এদিকে, আটককৃত ৬ জনের মধ্যে অবশিষ্ট আটককৃত ৪ জনকে কোথায়, কিভাবে রাখা হয়েছে তা এখনও আটককৃতদের আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী জানতে পারেনি বলে জানা গেছে। আটককৃতদের আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী অবশিষ্ট ৪ জনের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আটককৃত কোনো ব্যক্তিকে আদালতে বা পুলিশের নিকট হাজির করার আইনগত নিয়ম বা বিধান থাকলেও সেনাবাহিনী ও বিজিবি উক্ত দুই ব্যক্তিকে আটকের ৪ দিন পরই পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। অপরদিকে, অবশিষ্ট আটককৃত ৪ জনকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি এখনও পর্যন্ত বেআইনি ও অন্যায়ভাবে অজ্ঞাতস্থানে আটক রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার সকালে আলিকদম জোনের সেনাবাহিনী ও নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের বিজিবি একটি যৌথ দল দৌছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়ায় যৌথ অভিযান চালায়। উক্ত অভিযানে সেনা ও বিজিবি সদস্যরা কামিছড়া চাক পাড়ার কার্বারী মংলাফো চাক (৬০), চিংলাঅং চাক (৫০) ও তাঁর এক ছেলে (নাম জানা যায়নি), লাগ্যছু চাক (৫৫), উথোয়াই হ্লা মার্মা (২৪) ও ম্যানরুম মুরুং (৬০) নামে ৬ নিরীহ আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীকে আটক করে। আটক করার পর সেনা ও বিজিবি সদস্যরা কয়েক মহিলাসহ উক্ত ৬ গ্রামবাসীকে অমানুষিকভাবে মারধর করে। মারধরের সময় সেনা ও বিজিবি সদস্যরা “জেএসএস সন্ত্রাসীরা কোথায় থাকে, তাদেরকে কত টাকা চাঁদা দাও’ ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করে।

জানা গেছে, এই ঘটনার কারণে পাড়াবাসীসহ সকলের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। বিনাদোষে পাড়াবাসীর উপর সেনা ও বিজিবি সদস্যদের এরূপ মারধর ও নির্যাতনের ফলে চাক পাড়াবাসীরা গ্রামে অবস্থান করতে ভয় পাচ্ছে। ফলে উক্ত গ্রাম থেকে চাক গ্রামবাসী উচ্ছেদ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ, সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কর্তৃক ডাকাতি, রাবার বাগান কোম্পানী কর্তৃক হয়রানি ও ভূমি বেদখল, নিরাপত্তাহীনতা, চাক নারীর উপর সহিংসতা ইত্যাদি কারণে ইতিপূর্বে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লংগডু চাক পাড়া, বাদুঝিড়ি চাক পাড়া, সাতঘয্যা চাকপাড়া উচ্ছেদ হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
ছবিতে মারধর, আটক ও মিথ্যা মামলার শিকার উথোয়াই হ্লা মার্মা ও ম্যানরুম মুরুং