নাইক্ষ্যংছড়িতে স্কুলের নাম ব্যবহার করে ১৫০ একর ভুমি দখলের পাঁয়তারা

0
386

হিল ভয়েস, ৫ এপ্রিল ২০২৩, বান্দরবান: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে স্কুলের নাম ব্যবহার করে বহিরাগত ব্যক্তি কর্তৃক জুম্মদের ১৫০ একর জুমভূমি বন্দোবস্তীর পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ স্কুল স্থাপনের নমনীয় বিষয় উপস্থাপন করে জায়গা দখলের উদ্দেশ্যেই এই বন্দোবস্তীর পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে ওয়াকিবহাল অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ অহিদ উল্লাহ কর্তৃক ২৮ আগষ্ট ২০২২ ইস্যুকৃত এক নোটিশ মূলে জানা যায় যে, নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি ইউনিয়নের সোনাইছড়ি মৌজায় আন্তর্জাতিক মানের সীগাল বোর্ডিং স্কুল প্রতিষ্ঠার নামে ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) একর ভূমি বন্দোবস্তী পাওয়ার জন্য কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনের সীগাল ব্রাঞ্চের সীগাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান মাসুম ইকবাল আবেদন করেছেন৷

মাসুম ইকবালের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য আবেদনকারীকে বা তার মনোনীত সার্ভেয়ার বা প্রতিনিধি নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ভূমি অফিসে ১১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ উপস্থিত থাকার জন্য নাইক্ষ্যংছড়ি অফিস থেকে উক্ত নোটিশ জারি করা হয়৷

উক্ত নোটিশে কত ভাগ জমিতে অবকাঠামো স্থাপন করা হবে, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় কী উদ্যোগ নেয়া হবে, পর্যটন উন্নয়নে কী অবদান রাখবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কী অবদান রাখবে, স্থানীয় বাসিন্দারা কী সুবিধা পাবে ইত্যাদি তথ্য নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে৷

বস্তুত ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তি এবং চুক্তি মোতাবেক প্রণীত পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন মোতাবেক পরিষদের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে পার্বত্য জেলায় স্থায়ী বাসিন্দা নন তাদেরকে বন্দোবস্তী প্রদানের বিধিনিষেধ রয়েছে৷ তাই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ভূমি অফিসের তদন্তের এই উদ্যোগ ও নোটিশ জারি সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং পার্বত্য চুক্তি পরিপন্থী৷

অপরদিকে বর্তমানে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভূমি বন্দোবস্তী বন্ধ রয়েছে৷ কিন্তু পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রকল্পের জন্য বন্দোবস্তী প্রদান করা হচ্ছে৷ বন্দোবস্তীর সেই ফাঁক ব্যবহার করে স্কুল প্রতিষ্ঠাকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে ১৫০ একর জায়গা বন্দোবস্তীর পাঁয়তারা করা হচ্ছে৷ স্কুল প্রতিষ্ঠার যুক্তি দেয়া হলেও মূলত ভূমি দখলের উদ্দেশ্যেই বহিরাগত মাসুম ইকবাল ১৫০ একর ভূমি বন্দোবস্তীর এই আবেদন করেছেন বলে স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করেছেন৷

এছাড়া সহজে বন্দোবস্তী পাওয়ার জন্য পর্যটন, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা, কর্মসংস্থান, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সুবিধা লাভ ইত্যাদি বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে বলে ওয়াকিবহাল অভিজ্ঞ ব্যক্তি অভিমত ব্যক্ত করেন৷

জানা যায় যে, সোনাইছড়ি মৌজায় প্রস্তাবিত ১৫০ একর জমির মধ্যে লামা পাড়া, ক্যাং পাড়া, জুম খোলা ও চিংথোয়াই পাড়ায় মোট ৯৩টি জুম্ম পরিবার জুমচাষ, লেবু বাগান, সেগুন বাগান ও খামার সৃষ্টি করে বংশ পরম্পরায় প্রথাগতভাবে ভোগদখল করে আসছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার নামে বহিরাগত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জুম্মদের হাজার হাজার একরের প্রথাগত জুম ভূমি ও মৌজা ভূমি বেদখল, জুম্মদের উচ্ছেদ এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের অনেক উদাহরণ রয়েছে৷

তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃক স্কুলের নামে নানা কৌশলে ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে লামায় ম্রো জনগোষ্ঠীসহ জুম্মদের ২,০০০ একরের মতো জায়গা-জমি দখল এবং কয়েকটি গ্রামের ম্রো অধিবাসী উচ্ছেদের অভিযোগ রয়েছে৷

লামার সরই ডলুছড়ি মৌজায় এক আতংকের নাম ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’

অনুরূপভারে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কর্তৃকও শিক্ষা সুবিধা দেয়ার নামে জুম্মদের শত শত একর ভূমি বেদখলের উদারহণ রয়েছে৷ এমনকি সহজে সুবিধা লাভের জন্য সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ প্রকল্প হাতে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে৷

আলিকদমে স্কুলের নামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কর্তৃক ম্রো সম্প্রদায়ের জমি দখল

এমতাবস্থায় সীগাল বোর্ডিং স্কুল প্রতিষ্ঠার নামে ১৫০ একর ভূমি বন্দোবস্তীর আবেদন বাতিল করার জন্য স্থানীয় অনেক অধিবাসী দাবি জানিয়েছেন৷