হিল ভয়েস, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১৬৮নং রেজু মৌজাধীন ঘুমধুম ইউনিয়ন ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী হাতিমারা পাড়া নামে এক গ্রামে এক তঞ্চঙ্গ্যা নারী রোহিঙ্গা জঙ্গীদের কর্তৃক ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল বুধবার (১২ নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা আনুমানিক ৫:৩০টার দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সশস্ত্র সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর সন্ত্রাসীদের কর্তৃক এই ধর্ষণের চেষ্টা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ওই নারীর স্বামী হাতিমারা পাড়ার মৃত লংবু অং তঞ্চঙ্গ্যা বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐদিন বিকেলে ওই ভুক্তভোগী নারী তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বাজার থেকে বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে জামিরতলী খাল পেরিয়ে পাহাড়ের রাস্তা হাঁটার পথে হঠাৎ আরএসও-এর ১০-১৫ জনের একদল সদস্য তাকে আটকায় এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করতে থাকে।
এমন সময় ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া ৮-১০ জন জুম্ম যুবক ঐ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ওই তঞ্চঙ্গ্যা নারী সম্ভাব্য ধর্ষণ থেকে রক্ষা পায়। জুম্ম যুবকরা ওই নারীকে আটকিয়ে রাখা লোকদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আরএসও-এর সদস্য এবং তারা ৩৪ বিজিবি কমান্ডারের নির্দেশে সেখানে অবস্থান করছেন বলে জানায়।
এরপর জুম্ম যুবকরা ওই তঞ্চঙ্গ্যা নারীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। সাথে সাথে জুম্ম যুবকরা ঘুমধুমের ৯নং ওয়ার্ডের চৌকিদার রূপন বড়ুয়াকে ওই নারীর বিষয়টি জানালে, চৌকিদার রূপন বড়ুয়া ওই আরএসও-এর সদস্যরা তার লোক এবং তাদের বিষয়ে বেশি কিছু না বলে চুপ করে থাকার পরামর্শ দেন।
একটি সূত্র জানায়, চৌকিদার রূপন বড়ুয়া দীর্ঘদিন ধরে বিজিবি কমান্ডারের সাথে যোগসাজশে এবং আরএসও সদস্যদের মাধ্যমে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ করেছে। এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে রূপন বড়ুয়ার পরিচিত রয়েছে। তার বাড়িতে একসময় নিয়মিত ৩-৪ জন আরএসও সদস্য থাকত বলে জানা গেছে।
ঐ এলাকার জুম্মরা দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য এবং ডাকাতদের তৎপরতার কারণে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ৮ অক্টোবর ২০২৫ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সংলগ্ন গর্জন বনিয়া থেকে সুমন তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক জুমচাষীকে এবং গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ঘুমধুম ইউনিয়নের ভালুকিয়া থেকে ওয়ামং তঞ্চঙ্গ্যা নামে আরেক গ্রামবাসীকে অপহরণ করে আরএসও ও আরসা জঙ্গীরা।
ওই গ্রামবাসীদের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নাই। সেই ঘটনার পেছনেও চৌকিদার রূপন বড়ুয়ার হাত রযেছে বলে জানা যায়। চৌকিদার রূপন বড়ুয়া মিয়ানমারের সিগারেট ও ইয়াবা ব্যবসার পরিচালক বলে খবর পাওয়া যায়।
আরো উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৬ মে ২০২৪ তারিখে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং নাফ নদ ৫ নম্বর স্লুইসগেট এলাকা থেকে ছৈলা মং চাকমা (২৯) ক্যমংখো এ তঞ্চঙ্গ্যা (২৫) নামে দুইজন তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীকে রোহিঙ্গা জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক অপহরণ করা হয়।