নওগাঁর মহাদেবপুরে সান্তাল আদিবাসীদের ২৫তম ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব উদযাপিত

0
782

হিল ভয়েস, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, নওগাঁ: রাতভর পূজা-পার্বণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার বিকেলে মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল ফুটবল মাঠে উদযাপিত হয় আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কারাম। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ আয়োজনে আদিবাসীদের ২৫তম ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় কারাম মন্দিরের জমিদাতা পুরোহিত কার্তিক উড়াও এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এড. বাবুল রবিদাস, সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মূন্ডা, কোষাধ্যক্ষ সুধীর তির্কী, দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মানিক সরেন, রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আরিফুর রহমান, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুকুল পাহান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আদিবাসী যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান।

উৎসবে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তারা করোনাকালে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল, দমন–পীড়ন, হত্যা খুন ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। তারপর আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা এবং পৃথক ভূমি কমিশন প্রদানসহ আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমী সমূহে আদিবাসী পরিচালক নিয়োগের দাবি তোলেন।

উল্লেখ্য, সান্তাল আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম উৎসব বা ডাল পূজা। বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতিবছর উত্তরের সমতল ভূমির নওগাঁর আদিবাসীরা কারাম পূজা উদযাপন করে আসছে।

১৯৯৬ সাল থেকে নাটশাল মাঠে নিয়মিত উদযাপন করা হয় কারাম উৎসব। প্রতিবছর ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার চন্দ্র তিথিতে উদযাপন করা হয় এই পূজা। এ উৎসবকে ঘিরে মুখরিত হয়ে নওগাঁর আদিবাসী বসবাসরত এলাকাগুলো। পূজার সময় আদিবাসী দুই ভাই ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরা হয়। আদিবাসীরা বিশ্বাস করে, ধর্ম পালন করায় সকল ধরনের বিপদের হাত থেকে তারা রক্ষা পান । আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় তারা ক্ষতি হন। ভাদ্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। এরপর সন্ধ্যায় পঞ্জিকা মতে পূর্ণিমা শুরু হলে কারাম ডাল কেটে অস্থায়ী মন্ডপে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও কিছু বলার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর কারাম উৎসব উদযাপন করে।

এ সময় পুরো এলাকা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মিলনমেলা হয়ে ওঠে। পূজা শেষে পরদিন কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুকুরের জলে বিসর্জন দেয়া হয় কারাম গাছের সেই ডাল। আদিবাসীরা এ কারাম উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকে সারা বছর। এ বছর কারাম উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ২০টি সাংস্কৃতিক দল তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন এবং নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন ।