ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যদি পাহাড়িদের অপরাধ হয়, তাহলে আমরা এরকম হাজারটা অপরাধ করতে রাজি- দীপায়ন খীসা

হিল ভয়েস, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ঢাকা: খাগড়াছড়িতে এক জুম্ম ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের উপর পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা ও ঘরবাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুরের প্রতিবাদে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকাল ৪ ঘটিকায় আদিবাসী ছাত্র জনতার আয়োজনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন, দীপায়ন খীসা, কেন্দ্রীয় সদস্য, পার্বত্য জনসংহতি সমিতি; নিকোলাস চাকমা, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; এহসান মাহমুদ, নির্বাহী সম্পাদক , দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকা; টনি চিরান, সহ সভাপতি, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম; অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, সভাপতি, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ; মুক্তা বাড়ৈ, সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটি; মেঘমল্লার বসু, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ; নুমংপ্রু মারমা, সভাপতি, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ঢাকা মহানগর শাখা; শান্তিময় চাকমা,সাধারণ সম্পাদক, পিসিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা; রিয়া চাকমা, সাধারণ সম্পাদক, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটি; লিটন ত্রিপুরা, সাধারণ শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

দীপায়ন খীসা বলেন, আপনারা এত টালবাহানা না করে পাহাড়ের জন্য আইন করে দেন যে, যারা জাতে সেটেলার বাঙালি, ধর্মে মুসলিম তাদের জন্য ধর্ষণ বৈধ। আইন করে দেন পাহাড়ে ধর্ষণ হলে কোন প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করা যাবে না। শেখ হাসিনার বানিয়ে দিয়ে যাওয়া ন্যারেটিভ, পাহাড়িরা প্রতিবাদ করলেই সন্ত্রাসী সেই ন্যারেটিভ প্র্যাকটিস করা বন্ধ করেন। ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যদি পাহাড়িদের অপরাধ হয়, তাহলে আমরা এরকম হাজারটা অপরাধ করতে রাজি।

এহসান মাহমুদ বলেন, আদিবাসীদের প্রতিবাদের ভাষাকে দাবিয়ে রেখে রাষ্ট্র নিজেকে নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছে। পাহাড়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বৈষম্য বিলোপের ব্যবস্থা না করে উল্টো বৈষম্য, নিপীড়নের চাকা অব্যাহত রেখেছে। আদিবাসীদের বিষয়ে রাষ্ট্র নির্বাক। ক্ষমতার মসনদে বসে আদিবাসীদের হাহাকার এই সরকার দেখতে পাচ্ছে না।

অ্যাডভোকেট নিকোলাস চাকমা বলেন, ধর্ষকের বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের আদিবাসী ভাইবোনদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রেখে, ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্র আদিবাসীদের বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। সংবিধানের দোহাই দিয়ে এই রাষ্ট্রযন্ত্র নিপীড়নের মাধ্যমে আদিবাসীদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করে চলেছে।

টনি চিরান বলেন, খাগড়াছড়িতে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা বুলেটে আদিবাসী ভাই বোনদেরকে গুলি করে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যদি খাগড়াছড়িতে চলমান ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত না করে, তাহলে আদিবাসীদের মনে প্রতিবাদের যে আগুন জ্বলছে, তা বিস্ফোরিত হতে দেরি হবে না।

অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, খাগড়াছড়িতে আমাদের ভাইবোনদেরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু এই হত্যাকান্ডগুলো এই সরকারের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এই হচ্ছে এনজিওবাদী ফ্যাসিস্ট সরকারের নমূনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিতে না থাকলে, বাংলাদেশও শান্তিতে থাকবে না। আদিবাসীরা সবকিছু প্রতিহত করে সামনের দিকে আগাবে।

মুক্তা বাড়ৈ বলেন, খাগড়াছড়িতে আদিবাসী শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে হওয়া হামলার বিচার করতে রাষ্ট্র আজ ব্যর্থ। রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্ষকদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসীদের উপর হওয়ার নিপীড়ন ও নির্যাতনকে ছাত্র যুব সমাজ আর মেনে নিবে না।

নুমংপ্রু বলেন, খুবই কষ্টের এবং অবাক করার বিষয়- সাংবাদিক ভাইয়েরা সাজেকে পর্যটকদের সাথে কি হচ্ছে সেই সব খবর জানেন, কিন্তু খাগড়াছড়ির গুইমারায় কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে, কত পরিবারের ঘরবাড়ি পুরিড়ে গিয়েছে সেই খবর তারা জনেন না।

শান্তিময় চাকমা বলেন, পাহাড় আজ রক্তাক্ত, কিন্তু রাষ্ট্র বোবা, বধির, আদিবাসীদের আর্তচিৎকার তাদের কানে পৌছাচ্ছে না। খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার যথাযথ বিচার না হলে পাহাড় ও সমতলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে উঠবে।

রিয়া চাকমা বলেন, বছরের পর বছর রাষ্ট্র আমাদেরকে সন্ত্রাসী বানিয়ে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসী কায়দায় গুলি করেছে। এই রাষ্ট্রযন্ত্র আদিবাসীদের শান্তিপূর্ণ অবরোধে হামলার ইন্ধন যুগিয়েছে।

জানকি চিসিম বলেন, আদিবাসীদের উপর হওয়া নির্যাতন দীর্ঘদিনের। এই নির্যাতনে রাষ্ট্র নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আদিবাসী ছাত্রসমাজ এই অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই জারি রাখবে।

পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমার সঞ্চালনায় উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

বিক্ষোভ সমাবেশের পরে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে আদিবাসী ও প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসমূহ।

More From Author

+ There are no comments

Add yours