দখলে যাচ্ছে গারোদের মাঠটি

0
827

হিল ভয়েস, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, সুনামগঞ্জ  : সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের যুগ যুগ ধরে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ে লোকজন কর্তৃক খেলার মাঠ ও নানা পার্বণ-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করে আসা মাঠটি দখলে যাচ্ছে। সম্প্রতি স্থানীয় সেটেলাররা (অন্য স্থান থেকে আসা বসতি স্থাপনকারী) মাঠটি নিজেদের দাবি করে দখলের পাঁয়তারা করছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।

স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক হলেও কোনো মীমাংসা হয়নি। এখন মাঠটিতে গারোদের ঢুকতে দিচ্ছে না সেটেলাররা। এ জন্য গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ গারো সম্প্রদায়ের লোকজন জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে মাঠটি ফেরত চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। গত রোববার নতুন করে জেলা প্রশাসকের কাছেও আবেদন করা হয়েছে।

গারো সম্প্রদায়ের নেতা সুনীল দাজেল ও সঞ্জীব ডালবৎ বলেন, ১৯৪৮ সালে বড়গোপ টিলাটির গাছগাছালি পরিষ্কার করে আদিবাসী মান্দিরা (গারো) খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। প্রতিবছরই ফুটবল-ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন, জাতীয় দিবস, আদিবাসী দিবস উদযাপন করে আসছেন তারা এই মাঠে। কয়েক মাস আগে সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারী কিছু সেটেলার যুবক জোর করে মাঠ দখল করতে আসে। তারা মাঠে টানানো আদিবাসীদের পূর্বপুরুষের স্মৃতিচারণমূলক সাইনবোর্ডটি তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আদিবাসী কাউকে মাঠে না আসতে হুমকি দেয়।

খোজ নিয়ে জানা যায়, ৮০’র দশকে বিভিন্ন উপায়ে রাষ্ট্রীয় মদদে এলাকায় বাঙালির অনুপ্রবেশ হতে শুরু করে। যার ফলে টিলাগুলোতে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন তৈরি করে বাঙালি জনগোষ্ঠী যাদের মূলত বন্যায়, এবং বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করার কারণে বিতারিত এমন লোকরা সমাগম হতে শুরু করে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় নেতারা সেটেলারদেরকে নিজেদের ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে গারোদের জমি বা টিলা দখল করতে এসব সেটেলারদের মদদ দিয়ে থাকে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুলও জানিয়েছেন, এই টিলাটিতে একসময় আদিবাসীরাই থাকতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন সময়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও এখন বসবাস করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার অফিসে এ বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, আমি উভয় পক্ষকে মাঠে যাওয়া থেকে নিবৃত করেছি। আমার মেয়ের বিয়ের জন্য সালিশ যথাসময়ে করতে পারিনি। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রশাসনকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।

বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরের বন বিট কর্মকর্তা বীরেন্দ্র কিশোর রায় অবশ্য বলেছেন, ওই মাঠের জমি নিয়ে বহুদিন ধরেই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আছে। প্রকৃতপক্ষে এই জমি জেলা প্রশাসনের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। বন সম্প্রসারণের জন্য এই জমি দিতে বহু আগেই জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেছেন, ইউএনওকে বলে দেব দ্রুত বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দেওয়ার জন্য।