হিল ভয়েস, ২৫ আগস্ট ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় ব্যাপক সেনা অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই অভিযানে সেনাবাহিনী থানচি থেকে ৩ নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করেছে বলেও জানা গেছে।
শান্তিবাহিনী খোঁজার নামে সেনাবাহিনীর এই যুদ্ধংদেহী সামরিক অভিযানে বান্দরবানের জুম্ম এলাকাসমূহে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং জনগণকে হয়রানি সহ তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২ আগস্ট ২০২৫ হতে আলীকদম সেনা জোনের ৩১ বীর এবং রুমা সেনা জোনের ৩৬ বীর এর সেনাবাহিনীর কয়েক শত সদস্য বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন জুম্ম গ্রামে নির্বিচারে সামরিক অভিযান শুরু করে এবং এখনো তা চলমান রয়েছে।
এই অভিযানে আজ (২৫ আগস্ট) দুপুর ১:০০ টার দিকে সেনাবাহিনী থানচি উপজেলার বলীবাজার ইউনিয়নের ব্রহ্মদত্ত পাড়া গ্রামের ৩ নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে আটক করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন- নয়নজ্যোতি চাকমা (২৭), পীং-জ্ঞানময় চাকমা; করুণাময় চাকমা (৪০), পীং-মোহনবাঁশি চাকমা ও দয়াময় চাকমা (৩০), পীং-ললিত চন্দ্র চাকমা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়নি।
থানচি উপজেলার যেসব গ্রামে সেনা অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, সেগুলি হল- থানচির বলীবাজার ইউনিয়নের নাইন্দারি পাড়া, ডিংতে ম্রো পাড়া, শাকপাই ম্রো পাড়া, কমলাবাগান চাকমা পাড়া, কমলাবাগান ত্রিপুরা পাড়া, কমলাবাগান মারমা পাড়া, নাইক্ষ্যংপাড়া, ডাকশোয়েই পাড়া, জ্ঞানলাল চাকমা পাড়া, ক্যাকসু পাড়া, ব্রহ্মদত্ত পাড়া।
রুমা উপজেলার যেসব গ্রামে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, সেগুলি হল- রুমা সদর ইউনিয়নের নাইতং পাড়া, মালাঙ্গে পাড়া, বাসাদুও পাড়া, কিয়াকতাইং খুমি পাড়া, মেনরত হেডম্যান পাড়া; গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের পানতলা পাড়া, ডুলুঝিরি আপার পাড়া, থান্ডাঝিরি পাড়া, মেনরুই ম্রো পাড়া, ভারত পাড়া ও গালেঙ্গ্যা মারমা পাড়া।
রোয়াংছড়ি উপজেলার বাঘমারা ইউনিয়নের অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকায়ও সেনাবাহিনী একইভাবে অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে।
সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে থানচি সদর হতে বড় মদক নদীপথ পর্যন্ত ৫টি স্থানে, যেমন থানচি সদর, তিন্দু, রেমাক্রি, ছোটো মদক ও বড় মদক এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করেছে।
অভিযান চলাকালে সেনাবাহিনী জোরপূর্বক জুম্মদের মোবাইল ফোন চেক করছে, ফটো তুলছে এবং জনসংহতি সমিতির কর্মীদের আস্তানা ও তাদের ফোন নাম্বার জানতে চেয়ে নানাভাবে হয়রানি করছে বলে জানা গেছে।
আজ (২৫ আগস্ট) সকাল ৭টায় সেনাবাহিনী ক্যাকসু পাড়া হতে বলীবাজার যাওয়ার পথে বি-৭০ নাম্বারের একটি যাত্রীবাহী পিক-আপ গাড়ি থামায়। পিক-আপের ৩০ জন জুম্ম যাত্রীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা আটক করে রাখা হয় এবং বাজারে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়।
কাপ্তাই এলাকায়ও সেনা অভিযান
রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই সেনা জোনের ৩৮ ইবিআর এর সেনাবাহিনীও পার্শ্ববর্তী রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বড় পাড়া এলাকায় জনসংহতি সমিতির সদস্য খোঁজার নামে গত ২৩ আগস্ট হতে সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ১৫০-১৬০ জনের একটি সেনাদল গত ২৪ আগস্ট রাত আনুমানিক ৭:৩০ টায় রাজস্থলীর বড় পাড়া গ্রামে যায়। এরপর ঐ দিনই মধ্যরাতে সেনাবাহিনী গোটা বড় পাড়া গ্রামটি ঘেরাও করে। এসময় ঘুমন্ত গ্রামের লোকদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং গ্রামবাসীরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হন। এখনো সেখানে সেনাবাহিনী অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।