হিল ভয়েস, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ঢাকা: চলতি বছরে (২০২৫ সালে) সারাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অর্ধশতাধিক হত্যাসহ অর্ধ সহস্রাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার উদ্যোগে আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০.৩০টায় ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশশেষে এক বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, শুধুমাত্র ডিসেম্বরের প্রথম তিন সপ্তাহেই ৫ জন সংখ্যালঘুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৫ সালের ২ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রাণতোষ কর্মকার, ৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরের সালফায় মৎস্য ব্যবসায়ী উৎপল সরকার, ৬ ডিসেম্বর রংপুরের তারাগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রধান শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায় এবং ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টায় কথিত ধর্ম অবমাননার অজুহাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় গার্মেন্টস শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে অর্ধমৃত করে গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে বর্বরোচিতভাবে হত্যা।
এছাড়াও গত ১৯ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে ঝিনাইদহে গোপাল বিশ্বাস নামের এক রিক্সাচালককে স্থানীয় পৌরসভা গেইটের সামনে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা ভারতীয় গুপ্তচর ‘র’র এজেন্ট ট্যাগ লাগিয়ে আটক করে গণধোলাই দিয়ে স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে কথিত ছাত্র-জনতা।
সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ সমাবেশে এ মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে, এহেন লোমহর্ষক ঘটনা অব্যাহত রেখে স্বার্থান্বেষী অশুভ মহল চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অধিকতর অস্থিতিশীল করতে তৎপর। এর মধ্য দিয়ে তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে অবাধে ভোটদানের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আতঙ্কিত ও নিরুৎসাহিত করে চলেছে। গণতন্ত্রে উত্তরণে এহেন বাধা অপসারিত না হলে তা প্রকারান্তরে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে।

সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অনতিবিলম্বে বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানোর পাশাপাশি সহিংসতাকারীদের গ্রেফতার ও তাদের শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, বাংলাদেশ ঋষি পঞ্চায়েত ফোরামের সভাপতি রামানন্দ দাস, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুমন কুমার রায়, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের নেতা সুস্মিতা কর, ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফেডারেশন বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ দাস, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. এম কে রায়, বাংলাদেশ হিন্দু মহাসংঘের সভাপতি পিযুস দাস, বাংলাদেশ হিন্দু ঐক্য ফোরামের সভাপতি কে সি মজুমদার খোকন, বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. অনুপ কুমার সাহা, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা, বাংলাদেশ জাতীয় যুব হিন্দু মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে ও বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজীব সরকার প্রমুখ সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সচিব পলাশ কান্তি দে।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস ক্লাব চত্বর থেকে হাইকোটের সামনে দিয়ে পল্টন মোড় ঘুরে পুনরায় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। এছাড়া সারা দেশে একই দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
+ There are no comments
Add yours