ঢাকায় পিসিপি পলিটেকনিক শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন

হিল ভয়েস, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ঢাকা: “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকাস্থ পাহাড়ী ছাত্রাবাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা পলিটেকনিক শাখার সম্মেলন ও কাউন্সিল-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলন ও কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রুমেন চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমা এবং পিসিপির ঢাকা মহানগর শাখার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক কনেজ চাকমা।

পিসিপির ঢাকা পলিটেকনিক শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি জেমস ওয়াট চাকমার সভাপতিত্বে এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক কেরি চাকমার সঞ্চালনায় সম্মেলন ও কাউন্সিলে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাখা কমিটির সদস্য প্রজ্ঞা চাকমা।

রুমেন চাকমা বলেন, পৃথিবীতে যুগে যুগে জাতির অস্তিত্বের জন্য, আন্দোলন সংগ্রামের কাজে সবচেয়ে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে ছাত্র ও যুব সমাজ। এই তরুণ ছাত্র ও যুব সমাজের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে কোনো দোদুল্যমানতা থাকতে নেই, তাদের আছে সাহস, লড়াইয়ে মনমানসিকতা। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা সে-সময় শাসকের চোখে চোখ রাঙিয়ে বীরদর্পে লড়াই করেছেন। তাই বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে আরেকবার সেই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আপানারা সকলে জানেন, পাহাড়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটেলার বাঙালিরা বার বার আমাদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত করে চলেছে। স্থায়ী বাসিন্দা হতে গেলে রাজা তথা সার্কেল চীফ থেকে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হতো সেটি বাতিল করে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এই-সব কিছুর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় উপস্থিত হয়েছে। এজন্য পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনকে আমাদের অবশ্যই বেগবান করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের পাহাড়ের অনেকে বিভেদের কথা বলতে শোনা যায়, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম রাজনৈতিক দল হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। এই দলের নেতৃত্বে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এই ঐতিহাসিক ইতিহাসকে অস্বীকার করে এবং ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিকে বিরোধিতা করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইউপিডিএফ নামক চুক্তি বিরোধী দলের সৃষ্টি হয়েছিল। সে-সময় থেকে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসা শান্তিবাহিনী গেরিলাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করছিল, যারা নিজেদের জীবনের সোনালী অংশকে বিসর্জন দিয়ে এতবছর জুম্ম জাতির মুক্তির জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছিল। ইউপিডিএফই পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিভাজন সৃষ্টি করেছিল। সেই ইতিহাসকে আমাদের জুম্ম ছাত্রকে অবশ্যই জানতে হবে।

সৈসানু মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারা সুচনা করেছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তিনি বুঝেছিলেন স্বশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতির ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একটা সময় তার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের সামরিক শাসন যখন জারি হয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেলে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছিল।

নবনির্বাচিত সভাপতি জেমস ওয়াট চাকমা

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ দুই যুগের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তিটি আজ দীর্ঘ ২৮ টি বছরেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না বরং উপর্যুপরি জুম্ম জনগণের উপর শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনা বেড়েই চলেছে। আজকে সেই চুক্তিটি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য আরেকবার জুম্ম ছাত্র সমাজের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে এবং আজকের জুম্ম ছাত্র সমাজকে সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত হতে হবে।

কনেজ চাকমা বলেন, ১৯৮৯ সালে ৪টা মে সেনা সেটেলার বাঙালি কর্তৃক সংঘটিত লংগদু গণহত্যা এবং জুম্ম জনগণের উপর সংঘটিত হতে থাকা সকল নির্যাতন-নিপীড়ন, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে একঝাঁক প্রগতিশীল তরুণের চেতনা থেকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জন্ম হয়েছিল। আজকে পাহাড়ের তরুণের মধ্যে অনেকে সুবিধাবাদী, আত্মমুখী, দোদুল্যমানতা চিন্তা চেতনা লালন করে থাকে সে জায়গা থেকে প্রগতিশীল ও সাহসী অগ্রগামী অংশ রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হয়ে থাকে। জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্য তরুণ ছাত্র সমাজকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।

নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক প্রজ্ঞা চাকমা

সভাপতির বক্তব্যে জেমস ওয়াট চাকমা বলেন, আমাদের জাতির জন্য কাজ করার চিন্তা ভাবনাকে আরো বেশি শাণিত করে, সংগঠনের নীতি-আদর্শ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে ধারণ করে আমাদের সামনের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জুম্ম জনগণের উপর চলমান সকল নির্যাতন-নিপীড়নগুলো নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। ভবিষ্যৎ লড়াইয়ে জিততে গেলে আমাদের অবশ্যই প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। সে জায়গা থেকে আমাদের অবদানটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সকল বিভেদকে প্রতিহত করে আমরা জুম্ম জাতির অধিকার আন্দোলনে সামিল হয়ে জাতির মুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

সভাপতি হিসেবে পুনরায় জেমস ওয়াট চাকমা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রজ্ঞা চাকমা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে জ্ঞান শংকর চাকমাকে নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমা।

More From Author