ঠাকুরগাঁওতে সংখ্যালঘু পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা ও দেশ না ছাড়ালে মৃত্যুর হুমকি

0
792

হিল ভয়েস, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ঠাকুরগাঁও: ভাড়াটে সন্ত্রাসী কর্তৃক ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের শিধোর গ্রামে এক সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর, মালামাল লুট এবং দেশ ছেড়ে না গেলে পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২১ ডিসেম্বর ২০২০ খাদেমুল বাহিনী খ্যাত স্থানীয় এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক এই হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্ত্রাসীরা বাড়ি-ঘর ভাঙচুর কালে সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদেরকে ‘বাঁচতে চাইলে ভারতে চলে যা, দেশে থাকলে নিশ্চিত মৃত্যু, কেউ তোদের বাঁচাতে পারবে না’ বলে হুমকি প্রদান করে।

জানা গেছে, এ ঘটনায় বালিয়াডাঙ্গী থানায় খাদেমুলকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং জাতীয় হিন্দু মহাজোট বরাবর অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগি পরিবার।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জেএল নং-৭৫, মৌজা-শিধোর, খতিয়ান নং-এসএ-৩১, দাগ নং-১৩৮ এর ৪২ শতক জমি পৈত্রিক সুত্রে ভোগ দখল করে আসছে সুশেন চন্দ্রবর্মন গং। সম্প্রতি ঐ দাগের ৩ শতক জমি এক শরিক উক্ত এলাকার চিহ্নিত সুদারু ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান খাদেমুল ইসলামের নিকট বিক্রি করে। ইতিমধ্যে সুশেন চন্দ্র তাদের জমিতে পাকা ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করলে গত ২১ ডিসেম্বর রাতে খাদেমুল ইসলাম সন্ত্রাসী বাহিনীসহ সেখানে হাজির হয়ে দুই লক্ষ আশি হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় সুশেন বাপ-দাদার পৈত্রিক ভিটায় ঘর তুলতে কোন প্রকার চাঁদা দিবে না বলে ঘোষণা দিলে সন্ত্রাসীরা নির্মানাধীন ঘরগুলো লাঠি-সোটা, বল্লম, শাবল, লোহার হাম্বার দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। ঘর-বাড়ি ভাঙচুর কালে তাদের বাঁধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র উচিয়ে বলে ‘বাঁচতে চাইলে ভারতে চলে যা, দেশে থাকলে নিশ্চিত মৃত্যু’, তোদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। পরে উপায় না পেয়ে গোপনে ৯৯৯-এ কল দিলে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ সেখানে হাজির হয়। এসময় পুলিশ দেখে হুমকি দিতে দিতে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসী খাদেমুল বাহিনীর দল।

কান্না জড়িৎ কন্ঠে ক্ষতিগ্রস্ত সুশেন বলেন, বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ ধরে আমরা এখানে বাস করছি। আজ একটি সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আমাদের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করে ক্রমাগত ভিটে ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। খাদেমুল এলাকার একজন চিহ্নিত সুদারু। সম্প্রতি বিভিন্ন পেপার-পত্রিকায় তার নামে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তার ভয়ে ইতিমধ্যে অনেকে ভারতে চলে গেছে। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই এবং এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই। আমার বিশ্বাস আসামিদের ধরে রিমান্ড নিলে এর পিছনে কারা জড়িত সব তথ্য বেড়িয়ে আসবে।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক সুজন ঘোষ বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও নির্যাতনের ঘটনায় আমি হতাশ। কেননা যারা এই হামলা চালিয়েছে তারাও আওয়ামীলীগ আর যারা হামলার শিকার তারা বংশগতভাবে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দাসহ দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক সুজন ঘোষ বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও নির্যাতনের ঘটনায় আমি হতাশ। কেননা যারা এই হামলা চালিয়েছে তারাও আ’লীগ আর যারা হামলার শিকার তারা বংশগতভাবে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দাসহ দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ভানোর ইউপি চেয়ারম্যান আ. ওয়াহাব জানান, রাতের আঁধারে সংখ্যালঘু পরিবারের নির্মাণাধীন ঘর-বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।

বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি এ্যাড. অরুণাংশু দত্ত টিটো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আমার সাথে দেখা করেছে, বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা তাদের আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি এবং আমরাও ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

একই কথা বলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এর ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি প্রবীর কুমার রায়।
ভানোর ইউনিয়নে হিন্দু পরিবারের বাড়ী-ঘর ভাংচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল হক প্রধান জানান, প্রতিদিনই মারামারির ঘটনা ঘটছে। মামলা হয়েছে কি না বলতে পারবো না, দেখতে হবে বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

সূত্র: www.bd24live.com