জুরাছড়িতে সেনা অভিযানে ১৭ জুম্ম গ্রামবাসী আটকের শিকার

হিল ভয়েস, ২৭ আগস্ট ২০২৫, রাঙ্গামাটি: গতকাল (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এক সেনা অভিযানে রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার ৪নং দুমদুম্যা ইউনিয়ন ও ৩নং মৈদুং ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের ১৭ নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসী আটকের শিকার হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আটককৃত ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

সেনা সদস্যারা আটককৃত গ্রামবাসীদের বেদম মারধর ও নির্যাতন চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গতকাল থেকে জুরাছড়ির পার্শ্ববর্তী বিলাইছড়ি উপজেলার ৩২ বীর দীঘলছড়ি সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ তৌকির ইসলাম (বিএ-৮৭৬৩), ক্যাপ্টেন ফারহান ও ক্যাপ্টেন মুশফিকুর এর নেতৃত্বে ৮২ জনের একটি সেনাদল জুরাছড়ির ৪নং দুমদুম্যা ইউনিয়ন ও ৩নং মৈদুং ইউনিয়নে সেনা অভিযান শুরু করে। এসময় সেনা সদস্যরা ‘গাদা বন্দুক’ (স্থানীয়ভাবে তৈরি শিকারের জন্য ব্যবহার্য) পাওয়ার অভিযোগে ৪নং দুমদুম্যা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চাঞ্চল পাড়া ও ৩নং মৈদুং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গবহুলো চুক গ্রামের ১৭ গ্রামবাসীকে আটক করে।

এখনো পর্যন্ত উক্ত গ্রামবাসীরা সেনাবাহিনীর হেফাজতে আটক রয়েছে বলে জানা গেছে। আটককৃতদের মধ্যে ১০ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে, ৭ জনকে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে।

গ্রামবাসীর সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের জুম্ম গ্রামবাসীরা প্রায়ই তাদের জুমের ধানক্ষেত বন্য শুকরের আক্রমণ হতে রক্ষা বা বন্য শুকর শিকারের জন্য এইসব গাদা বন্দুক ব্যবহার করে থাকে।

আটককৃত চিহ্নিত জুম্ম গ্রামবাসীরা হলেন- দুমদুম্যা ইউনিয়নের চাঞ্চল পাড়া গ্রামের (১) দেবরাজ চাকমা, পীং-লক্ষীচন্দ্র চাকমা, (২) চিজি মনি চাকমা, পীং-লক্ষীচন্দ্র চাকমা, (৩) নিগিরা ধন চাকমা, পীং-লক্ষ্মী চন্দ্র চাকমা, (৪) নেতাজি চাকমা, পীং-কালা মরদ চাকমা, (৫) গোপাল চাকমা, পীং-যতন চাকমা, (৬) তুফান চাকমা, পীং-যতন চাকমা এবং মৈদুং ইউনিয়নের গবহুলো চুক গ্রামের (৭) নন্দলাল চাকমা, পীং-রসিক চন্দ্র চাকমা, (৮) কালা উদো চাকমা, পীং-অরুন কুমার চাকমা, (৯) অমর কান্তি চাকমা, পীং-যুব রাজ চাকমা, (১০) আকাশ চাকমা, পীং-চিরন জীৎ চাকমা, (১১) নিলময় চাকমা, পীং-সুদীশ কুমার চাকমা, (১২) পান্দব চাকমা, পীং-সুদীশ কুমার চাকমা, (১৩) কালা চাকমা, পীং-সুদীশ কুমার চাকমা, (১৪) লাইপং চাকমা, পীং-গুনোমনি চাকমা ও (১৫) চাগা কুলো চাকমা, পীং-সুদেশ কুমার।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেনাবাহিনী এখনো সেখানে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে, মৈদুং ইউনিয়নের ফকিরাছড়া সেনা ক্যাম্প থেকে আরো একটি সেনাদল ঘটনাস্থলের দিকে আসছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে সেনাবাহিনীর এমন নিরীহ গ্রামবাসীদের নির্বিচারে ধরপাকড়ের ফলে জুম্ম গ্রামবাসীদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ও আশেপাশের গ্রামের বাড়ির নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা ছাড়া অন্যান্য পুরুষ সদস্যরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

More From Author