হিল ভয়েস, ২ অক্টোবর ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলীতে অবস্থানরত সেনাসমর্থিত সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের কর্তৃক সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় দুই জুম্ম গ্রামবাসীকে তাদের আস্তানায় ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর এবং পরে একজনকে ছেড়ে দিলেও অপরজনকে স্থানীয় সেনাক্যাম্পে হস্তান্তর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার দুপুর ১:০০ টার দিকে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন জীবতলি ইউনিয়নের গবঘোনা সেনা ক্যাম্পে একদল সেনা সদস্য এবং খোকন চাকমা ও বীরলক্ষ চাকমার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের একদল সদস্য যৌথভাবে পার্শ্ববর্তী বাকছড়ি, ধুল্যাছড়ি ব্রিজ, গুড়াছড়ি, হরিণছড়া, অংছিলা কার্বারী পাড়া ইত্যাদি গ্রামে তল্লাসী চালায়।
এসময় সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী সদস্যরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে সোনাধন চাকমা (৪০), পীং-কার্তিক চন্দ্র চাকমা-কে হরিণছড়া গ্রামের তার নিজের চা দোকান থেকে এবং লাইছি মং মারমা (৩৮), পীং-টিউ মহাজন মারমা-কে অংছিলা কার্বারী পাড়ার তার নিজের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জীবতলিতে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়।
জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা উক্ত দুই ব্যক্তিকে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করে। পরে বিকেল ৫:০০ টার দিকে সন্ত্রাসীরা সোনাধন চাকমাকে ছেড়ে দিলেও, লাইছি মং মারমাকে বিকেল ৬:০০ টার দিকে স্থানীয় জীবতলি সেনা ক্যাম্পে হস্তান্তর করে।
এরপর স্থানীয় স্থায়ী বাঙালি অধিবাসী মোঃ জহির আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে অংছিলা গ্রামের কতিপয় মুরুব্বী জীবতলি সেনা ক্যাম্পে গিয়ে লাইছি মং মারমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
লাইছি মং মারমা জনসংহতি সমিতির অংছিলা কার্বারী পাড়ার গ্রাম কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সেনাবাহিনী এবং সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে প্রায় নিয়মিত পার্শ্ববর্তী জুম্ম গ্রামগুলিতে ও হ্রদ এলাকায় ব্যাপক টহল ও তল্লাশি অভিযান চালিয়ে থাকে এবং জনগণকে নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সকাল ৮:০০ টায় বিলাইছড়ি থেকে রাঙ্গামাটিগামী একটি লঞ্চকে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা জীবতলীস্থ তাদের আস্তানায় ভিড়াতে বাধ্য করে। উক্ত লঞ্চ থেকে বরকল উপজেলার কলাবন্যা গ্রামের নতুন চন্দ্র চাকমার ছেলে লক্ষী বিজয় চাকমা (২৮) ও জীবতলী ইউনিয়নের ধুল্যাছড়ি গ্রামের মঙ্গল কুমার চাকমার ছেলে ফড়া চাকমাকে নামিয়ে রাখে। জনসংহতি সমিতির সাথে যোগাযোগ আছে এই অভিযোগ এনে সন্ত্রাসীরা তাদের আস্তানায় নিয়ে আটককৃত দুইজন ব্যক্তি নাকে মুখে পানি ঢেলে দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে কৌশল্যাঘোণা মৌজার হেডম্যান যতীন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যার জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়।
অন্যদিকে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা মগবান ইউনিয়নের গড়াকাবা গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী অরুণ চাকমা (১৭), এসএসসি পরীক্ষার্থী মহিম চাকমা (১৬), এসএসসি পরীক্ষার্থী রতন চাকমা (১৭) ও নব জ্যোতি চাকমা প্রমুখ ছাত্রদেরকে হুমকি দিচ্ছে। মহিম চাকমার পিতা নবজ্যোতি চাকমাকে দুই লক্ষ টাকা ও অরুণ চাকমার পিতা নিশি কুমার চাকমাকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদানের নির্দেশ দেয় সন্ত্রাসীরা। অন্যথায় তাদের ছেলেদের হত্যা করা হবে বলে সন্ত্রাসীরা হুমকি প্রদান করে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সেনা জোন কর্তৃপক্ষ রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা, বালুখালী ও মগবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার, কার্বারী, হেডম্যান ও জেলেদেরকে জোনে উপস্থিত হতে নির্দেশ প্রদান করে। জোনে গেলে এসময় সেনাবাহিনী দুই মেজর তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের চাঁদা প্রদানের অভিযোগ আনে। সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে তথ্য না দিলে তাদেরকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে উক্ত দুই মেজর হুমকি দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেলে জানান যে, সেনাবাহিনীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা মৎস্যজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ লোক থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়, মারধর ও অপহরণ করলেও সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিলে উল্টো জেলেদের উপর নানা হুমকি দিয়ে চলেছে।
 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
             
                             
                             
                             
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        