চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা’র সংবাদ সম্মেলনের নিন্দা এবং লিজ বাতিলসহ ম্রোদের ভূমিতে হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে পিসিপি

0
1049

হিল ভয়েস, ২৫ নভেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি: বান্দরবান পার্বত্য জেলার চিম্বুক পাহাড়ে আদিবাসী ম্রোদের জায়গা দখল করে ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের লিজ বাতিল ও সকল প্রকার পর্যটন স্থাপনা বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আজ (২৫ নভেম্বর) সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই দাবি জানানো হয়েছে।

পিসিপি তার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, গত ২২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে “চিম্বুক পাহাড়ে পর্যটন হোটেল স্থাপনের বিষয়ে”বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এর সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টিকে চিম্বুক পাহাড়ের আদিবাসী ম্রোদের জায়গা দখল ও উচ্ছেদ করে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ ও পর্যটন স্থাপনা নিয়ে নিজের দায় এড়ানো হিসেবে দেখছে বলে উল্লেখ করেছে।

পিসিপি তার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, ‘বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে সরাসরি প্রতারণা করেছে’ বলে উল্লেখ করে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে আলাপ-আলোচনাক্রমে উক্ত বিতর্কিত জমিটি পরিষদের দখলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে কাজে না লাগিয়ে পরিষদ হীনস্বার্থে ‘পর্যটনের জন্য’ সেনাবাহিনীর নিকট ৪০ বছরের মেয়াদে লীজ দিয়েছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য ক্ষতিকারক, আদিবাসী জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও সংস্কৃতির জন্য ধ্বংসাত্মক, জুম্ম জনগণের প্রথাগত ভূমি অধিকার পরিপন্থী তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও চুক্তি মোতাবেক প্রণীত পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও পর্যটনের জন্য সেনাবাহিনীকে লীজ দেয়া নি:সন্দেহে ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে প্রতারণার সামিল।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘হর্টিকালচারের নামে ২০ একর লীজ নেয়া জমি সামরিক বাহিনী কিংবা কর্পোরেট কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার আগে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ স্থানীয় ম্রো আদিবাসীদের সাথে আলোচনা করেনি। পার্বত্য জেলা পরিষদ, সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপের মধ্যেকার ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরের একটি খবর প্রকাশিত হয় (কক্সবাজার কণ্ঠ, ৮ জুন ২০১৫)। সেসময় এর বিরুদ্ধে স্থানীয় ম্রো আদিবাসীরা পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ না করার দাবি জানালেও তাদের সে দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু ২২ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিকদার গ্রুপের সাথে চুক্তিপত্র করার কথাটি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, ‘হোটেল বিল্ডিংয়ের সাথে পর্যটকদের এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে ১২টি পৃথক ভিলা, আধুনিক ক্যাবল গাড়ি, রাইড এবং সুইমিং পুলসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক সুবিধা, ছড়া-ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে পানি ব্যবস্থা ইত্যাদি স্থাপনা থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ব্যাপক পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বিপর্যয় এবং প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি হবে। কেবল তাই নয়, ম্রো জনগোষ্ঠীসহ আদিবাসী জুম্ম জনগণের উপর নেতিবাচক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব পড়বে। স্বভাবতই গোটা চিম্বুক ভ্যালীর ম্রো বসতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পূর্বেকার কাপ্তাই বাধেঁর মতো হাজার হাজার জুম্ম উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরাসরি চারটি ম্রো আদিবাসীদের পাড়া উচ্ছেদ করে নাইতং পাহাড়ের ২০ একরের বাইরে যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে দোলা পাড়াবাসীর বাগান ও চাষের ভূমি, কাপ্রু পাড়ার ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক লাল পতাকা পুঁতে দিয়ে আনুমানিক ৮০০ থেকে ১০০০ একরের মত জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, যে বিষয় সংবাদ সম্মেলনে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

পিসিপি আরও উল্লেখ করে, ‘১৯৯০-এর দশকে সুয়ালকে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের নামে সাড়ে ১১ হাজার একর এবং রুমায় সেনানিবাস সম্প্রসারণের নামে ৯ হাজার একর জায়গা জোরর্পূবক অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যে জমিগুলো ছিল ম্রোদের, যেখান থেকে ইতিমধ্যেই শত শত ম্রো পরিবার উচ্ছেদ হয়ে পড়েছিল।’

পিসিপি ‘পার্বত্য চুক্তির ২৩ বছর হতে চললেও পার্বত্য জেলা পরিষদ গণতান্ত্রিক না হয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের লুটপাটের একটা আস্তানায় পরিণত হয়েছে’ বলে দাবি করে।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও আইন মোতাবেক পার্বত্য অঞ্চলে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম ও পরিষদের কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনার বিধান থাকলেও বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তা করেননি বলে দাবি সংগঠনটির।

চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা’র সংবাদ সম্মেলনটি ‘প্রতারণামূলক, বাস্তব বিবর্জিত ও চুক্তিবিরোধী’ বলেও দাবি করে এর তীব্র নিন্দা জানায় পিসিপি।