হিল ভয়েস, ২৮ মে ২০২৫; রাঙ্গামাটি: আজ চিংমা খেয়াংয়ের ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও সাধারণ বম জনগোষ্ঠীর মুক্তির দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখা কর্তৃক এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক উলিসিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সজল চাকমা, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী প্রিয়োতা চাকমা প্রমুখ।
উলিসিং মারমা বলেন, গত ৫ মে চিংমা খেয়াংয়ের ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ঘটনার প্রায় একমাস হতে চলেছে। অথচ ময়না তদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় নি। চিংমা খেয়াংয়ের পরিবার স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন যে, দর্শক ও হত্যাকারীরা হলো পর্যটক। বান্দরবানের থানচি উপজেলায় যাওয়ার সময় অসংখ্য সেনাক্যাম্পের সামনে দিয়ে যেতে হয়। সেনা ক্যাম্পে পর্যটকদের এন্ট্রি করতে হয়। অথচ প্রশাসন এখনো অপরাধীদের ধরতে পারছে না। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় মূলত সেটেলার বাঙালিরা এসব ধর্ষণ ও নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করে বেড়াচ্ছে। তাই তারা এসব অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কেএনএফ অভিযানের নামে সাধারণ বম জনগোষ্ঠীদের গ্রেফতার সেনাবাহিনীর একটি পরিকল্পনা। শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ বম জনগোষ্ঠী আর কেএনএফ কিন্তু এক নয়। অন্যান্য জনগোষ্ঠীসমূহের বম জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আমরা যদি এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তুলি তাহলে একদিন আমাদের অস্তিত্ব মুছে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
সংহতি বক্তব্যে সজল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যতগুলো ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে তা সংঘঠিত করেছে সেটেলার বাঙালি, যার একটিরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। প্রশাসনের মদদে মূলত এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যার কারণে প্রশাসন এসব ঘটনার ব্যাপারে উদাসীন থাকে। স্বাধীনতার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন দাবানল এবং চুক্তির পরে অপারেশন উত্তরণ নামে সেনাশাসন জারি রাখা হয়। এছাড়াও এরশাদ-জিয়ার আমলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়। যারা এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে বেড়াচ্ছে। আর প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে।
তিনি আরো বলেন, ৭২ এর সংবিধানে আমাদেরকে অস্বীকার করা হয়েছিলো। আজকের গঠিত সংবিধানেও সংস্কার কমিশনে বহুত্ববাদকে তারা গ্রহণ করতে চায় না। আমাদের অস্বীকার করা হচ্ছে। আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি ছাত্রসমাজকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর লড়াই সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি চিংমা খেয়াংয়ের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরীহ সাধারণ বম জনগোষ্ঠীদের মুক্তির দাবি জানান।
সাধারণ শিক্ষার্থী প্রিয়োতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় আমরা প্রশাসনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখি না। উপরন্তু আমরা পাহাড়ে সেনাশাসন দেখতে পায়। চিংমা খেয়াংয়ের ঘটনার বিচারহীনতা ও সাধারণ বম জনগোষ্ঠীর গ্রেফতারের মত ঘটনা সরকারের অদূরদর্শিতার লক্ষণ। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজাকার খোঁজার অভিযানে সেনাশাসন দেখতে পাই। পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার লক্ষ্যে নিরাপত্তার নামে সেনাশাসন জারি রেখেছে।এখানে নিরাপত্তাবাহিনীর মদদে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক হত্যা, গুম, ধর্ষণ ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটেই চলেছে। আমাদের এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন , রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সূচনা চাকমার সঞ্চালনায় ও সভাপতি এলি চাকমার সভাপতিত্বে উক্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রিয়া চাকমা।