চবিতে মহান নেতা এম এন লারমা স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৩ সম্পন্ন

0
278

হিল ভয়েস, ৬ মার্চ ২০২৩, চট্টগ্রাম: আজ ৬ মার্চ ২০২৩, সোমবার, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা কর্তৃক প্রতি বছরের মতো এই বছরও আয়োজিত ‘মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৩’-এর ফাইনাল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমন মারমা এবং উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি থোয়াক্যজাই চাক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পিসিপির চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চবি সংসদের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক ও টিএসএফ এর চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক গুনেন ত্রিপুরা প্রমুখ।

খেলার শুরুতে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে এযাবৎ যারা আত্মোৎসর্গ করেছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং এরপর উপস্থিত উদ্বোধকের উদ্বোধন ঘোষণার মধ্য দিয়ে খেলা শুরু হয়। খেলা শেষে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিসিপির চবি শাখার সভাপতি নরেশ চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমা। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সত্যপ্রিয় চাকমা।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুমন মারমা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সমাজে মাদকের প্রবণতা বেড়েছে। তাই আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও খেলাধুলা চর্চার মাধ্যমে এধরনের সামাজিক অবক্ষয়কে মোকাবেলা করতে হবে। দেশের আদিবাসীদের উজ্জ্বল নক্ষত্র মারিয়া মান্দাদের মত আমাদের গৌরব অর্জন করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে সমাজের উন্নয়নের জন্য অবদান রাখতে হবে। নারীদেরও এইসব সামাজিক কাজে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এগিয়ে না আসে তাহলে আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে আগ্রাসনের স্বীকার হবো। মহান নেতা এম এন লারমার দেখিয়ে যাওয়া জুম্ম জাতীয়তাবাদকে আমাদের ধারণ করতে হবে।’

এছাড়াও উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘আমাদের শুধু একাডেমিক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, আমাদেরকে রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়েও চিন্তা করতে হবে। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছি সকলকে এম এন লারমা যে শিক্ষা দিয়েছেন সেটিকে ধারণ করে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং একইসাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিষয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। যদি এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয় তাহলে পাহাড়ি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিপীড়িত আদিবাসীরা আছি সংখ্যায় কম হতে পারি। কিন্তু আমাদের অধিকার আমরা রক্ষা করার ক্ষমতা রাখি এবং আমাদেরকে বিকশিত করার ক্ষমতা আমাদের মাঝেই আছে। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

ফাইনাল খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অংশগ্রহণ করে ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের টিম হিল ব্রাদার্স ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের টিম তাজিংডং। খেলার প্রথমার্ধে হিল ব্রাদার্স ব্যাটিং করে ১১৮ টার্গেট দেয় এবং দ্বিতীয়ার্ধে তাজিংডং এর বিপক্ষে ১০ রানে বিজয়ী হয় টিম হিল ব্রাদার্স। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পুরস্কার অর্জন করেন হিল ফোর্স টিমের পাকলাং ম্রো, সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন তাজিংডং টিমের অংশে প্রু মারমা এবং ম্যান অব দ্য ফাইনাল নির্বাচিত হন হিল ব্রাদার্স টিমের কিরণ চাকমা। পুরস্কার বিতরণী শেষে সভাপতি নরেশ চাকমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই সমাপনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সাতশতের অধিক আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও ঐক্য সুদৃঢ় করার জন্যে এবং তরুণ ছাত্রসমাজে এম এন লারমার আদর্শকে প্রসারের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা প্রতিবছর এই টুর্নামেন্টটি আয়োজন করে থাকে।