চবিতে নবীন আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পরিচিতি অনুষ্ঠান ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

0
358

হিল ভয়েস, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, চট্টগ্রাম: আজ ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রিঃ রোজ মঙ্গলবার “এসো ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এগিয়ে যাবো, জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিবো” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া নবীন আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পরিচিতি অনুষ্ঠান ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়স্থ জারুলতলায় বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় মিলনমেলা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জেসী ডেইজী মারাক। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চবি সংসদের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমা, রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী, চবির সাংগঠনিক সম্পাদক পহেলা চাকমা, বিটিএসডব্লিউএফ, চবি অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক সুখীজয় তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কার্যকরী সদস্য দীপেন বিকাশ ত্রিপুরা ও সিনিয়র শিক্ষার্থী জিত্রি দেওয়ান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নবীন শিক্ষার্থী জাল্লাং হাজং ও প্রত্যাশা চাকমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেসী ডেইজী মারাক বলেন, “একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে জানার এবং একজন মানবিক মানুষ হিসেবে বিকশিত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা মানেই যেকোন বিষয়ে জানার সুযোগ তৈরি হওয়া কারণ এখানে জ্ঞানের জগৎটা উন্মুক্ত। একজন মানুষ নিজের কাছে সৎ থাকলে পরিবার সমাজের কাছেও সৎ হতে পারে।”

তিনি আরো বলেন, “মানবিক কাজের জন্য নিজেকে জানাটা প্রয়োজন। এজন্য নিজের কাজে সৎ থাকতে হবে এবং অন্যজনকেও শ্রদ্ধা করতে হবে। এভাবে জাতি ও সমাজের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে হবে।”

প্রত্যয় নাফাক বলেন, “একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে আমাদের আগে ভয়কে জয় করতে হবে। ভয়কে জয় করতে গিয়ে জীবনে আমাদের নানা দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এসময় নিজেকে শক্তভাবে ধরে রাখা উচিত। একজন প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সন্তান হিসেবে আমাদের এই অর্জিত জ্ঞান দেশ-সমাজ ও জাতি অগ্রগতির জন্য কাজে লাগাতে হবে।”

অন্তর চাকমা বলেন, “দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আমরা নানা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এক একজন প্রতিনিধি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশাল ক্যাম্পাসে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জ্ঞান আহরণ করতে হবে, মিলেমিশে থেকে একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরবর্তীতেও আমাদের এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন যেন অটুট থাকে সেটা খেয়াল রাখা দরকার। তাছাড়া নিজের শেকড়ের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এজন্য ভবিষ্যতে আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন দেশ, সমাজ ও জাতির কথা ভেবে এগিয়ে আসা উচিত।”

পহেলা চাকমা তার বক্তব্যে বলেন,” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবার মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসছে। এখানে নিজের সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি তার বিকাশ সাধনের জন্য কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে এখানে। সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি রঁদেভূ সংগঠন আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। মোটকথা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য চর্চা করা আমাদের সকলের উচিত। এগুলো ছাড়া আমাদের অস্তিত্বের কথা ভাবা যায়না।”

এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন সিনিয়র শিক্ষার্থী জিট্রি দেওয়ান, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরাম, চবি অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক সুখীজয় তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কার্যকরী সদস্য দীপেন বিকাশ ত্রিপুরা প্রমুখ। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনুভূতি প্রকাশমূলক বক্তব্য প্রদান করেন রাম্রাসাইন মারমা, এম্ব্রোজ খেয়াং ও কমল তঞ্চঙ্গ্যা। মিলনমেলার আহ্বায়ক অপূর্ব চাকমার সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে।