হিল ভয়েস, ১৯ আগস্ট ২০২৫, চট্টগ্রাম: গতকাল ১৮ আগস্ট ২০২৫ (সোমবার) বিকাল ৩ ঘটিকায় ‘হে নবীন, জ্ঞানের সমুদ্রে গাই জীবনের জয়গান, শেকড়ের টানে মেলাবো প্রাণে প্রাণ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে নবীন আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে জারুলতলায় পরিচিতিমূলক মিলনমেলা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আনন্দ বিকাশ চাকমা, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, উমেছেন, সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসী বিয়াগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, তানজিমা তাহরিন কনক, প্রভাষক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় , সুমন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, নুখ্যাই মং মারমা, সাধারণ সম্পাদক, রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় , মংকিউ চাক, সভাপতি, বাংলাদেশ চাক স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, দেবাশীষ তঞ্চঙ্গ্যা, সভাপতি, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল, সাথু অং মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্সটস কাউন্সিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, জুহেস ত্রিপুরা, সাংগঠনিক সম্পাদক, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখা সহ প্রমুখ।
নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচয় পর্বের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয় সেইসাথে নবীদের মধ্য থেকে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন অণুজীব, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, কাঞ্চন চন্দ্র বর্মণ, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী, রিপায়ন ত্রিপুরা এবং ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী খেইমি ওয়েন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, নানা বাধা পেরিয়ে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে এসে জ্ঞানের মহা-সমুদ্রে পা দেওয়া শিক্ষার্থীদের দায়িত্বের শেষ নেই। নিজের জীবনকে গড়ে তোলা যেমন দায়িত্ব তেমনি নিজের পিছিয়ে থাকা সমাজকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের বহন করতে হবে। তাই আমাদের শিখতে হবে, সমাজের জন্য কাজ করতে হবে। জ্ঞানের যেমন চর্চা করতে হবে তেমনি গুণেরও চর্চা করতে হবে। জ্ঞান ও গুণের সমন্বয়ে আমাদের মানবিক চরিত্রসম্পন্ন একজন মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উমেছেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সকলের সময়কে গুরুত্ব দিয়ে চলা উচিত। পরিশ্রম হলো সাফল্যের চাবিকাঠি। পরিশ্রম করে যেমন আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করেছেন, একইভাবে পরিশ্রম করেই আগামীতেও লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত হয়ে জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়াতে হবে।
তানজিমা তাহরিন বলেন, পাহাড়ের প্রত্যক মানুষ অনেক পরিশ্রমী। আজকে যারা নবীন তারাও অনেক পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এই পরিশ্রমকে ধরে রেখে সাফল্যের দিকে এগোতে হবে। সেই সাথে আমাদের বিভিন্ন ভাষা বিশেষ করে নিজ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভাষা-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
সুমন চাকমা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অন্যতম একটা মিলন ক্ষেত্র। আদিবাসী শিক্ষার্থীরা চাইলে অনেক সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কিছু করতে পারে। তারা খেলাধুলা, পড়াশোনা ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যথেষ্ট সোচ্চার। আমাদের ক্যাম্পাসেও আদিবাসীদের উদ্যোগে অনেক কিছুই হয়ে থাকে। গেট টুগেদার আয়োজনের মধ্য দিয়ে আদিবাসী নবীন শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক বন্ধন যেমন বৃদ্ধি পায় একইভাবে সিনিয়র ও শিক্ষকদের সাথেও পরিচয় হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার, ভূমি ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য মেধাবী তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমাজ উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
উক্ত মিলনমেলায় প্রায় ৭০ জনের অধিক নবীন আদিবাসী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিবছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নবীন আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই পরিচিতিমূলক গেট টুগেদার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের নবীন আদিবাসী শিক্ষার্থী পোতপোত্ত্যে চাকমা ও পালি বিভাগের শিক্ষার্থী মনিকা তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গেট টুগেদার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অংচাই সিং এবং আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থী স্মরণী চাকমা।
আলোচনা সভার পরবর্তীতে নবীন আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
+ There are no comments
Add yours