চন্দনাইশে সেনাবাহিনী কর্তৃক ‘সন্ত্রাসী আখ্যা’ দিয়ে ৬ মারমা বন্য শুকর শিকারীকে আটক

হিল ভয়েস, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) বান্দরবার সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ৬ নিরীহ আদিবাসী মারমা গ্রামবাসী বান্দরবানের সীমান্তবর্তী চন্দনাইশ এলাকায় বন্য শুকর শিকার করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেনাবাহিনী তাদেরকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা থেকে আটক করে।

গতকাল দুপুর ১২:৩০ টার দিকে চন্দনাইশ সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন আরেফ আসমার জয়-এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল বন্য শুকর শিকারী ওই ৬ মারমা গ্রামবাসীকে আটক করে এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন গণমাধ্যমে আটককৃত ওই ব্যক্তিদের ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসী’ ও ‘জঙ্গি’ বলে আখ্যায়িত করতে দেখা গেছে।

ক্যাপ্টেন কর্তৃক বন্য শুকর শিকারী ওই পাহাড়িদের ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসী’ ও ‘জঙ্গি’ হিসেবে লেবেল দেওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে অনেক ব্যক্তিকে প্রতিবাদ জানাতে ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ এই ঘটনাকে ওই ক্যাপ্টেনের প্রমোশন পাওয়ার সস্তা কৌশল বলেও উল্লেখ করেন।

আটকের শিকার ৬ মারমা গ্রামবাসী হলেন- (১) লুসাই মং মারমা, পিতা-মৃত অংখয়চিং মারমা; (২) মংসানু মারমা, পিতা-মৃত থোয়াইমংচিং মারমা; (৩) মংনুচিং মারমা, পিতা-মৃত উসামং মারমা; (৪) সাচিংপ্রু মারমা, পিতা-শৈহ্লাখয় মারমা; (৫) লুপ্রুমং মারমা, পিতা-মংনিশে মারমা ও (৬) চাইসাউ মারমা, পিতা-সাপ্রু অং মারমা। তারা সকলেই বান্দরবান সদর উপজেলার ২নং কুহালং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চেমি ডলু পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

আটকের সময় সেনাবাহিনী উক্ত শিকারীদের কাছ থেকে শুকর মারার একটি দেশীয় বন্দুক, কয়েক রাউন্ড গুলি, তিনটি দাও/চাপাতি, একটি কান্তা, একটি সাধারণ টর্চ ইত্যাদি পায় বলে জানা যায়। আটকের পর সেনাবাহিনী আটককৃতদের ব্যাপক মারধর করেছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, আদিবাসী পাহাড়ি লোকজন মাঝেমধ্যে জঙ্গলে বন্য শুকর শিকার করতে করতে ওই এলাকায় যায়। এলাকার আদিবাসী ও বাঙালি জনগণ প্রায়ই এই ব্যাপারটি সাধারণ ঘটনা বলে জানেন। এতে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে কোনো সমস্যা হয় না। উল্লেখ্য যে, যুগ যুগ ধরে আদিবাসী জুম্মরা নিজেদের তৈরি বন্দুক ও গুলি, জাল দিয়ে সদলবলে বিশেষ করে বন্য শুকর শিকার করে থাকে।

উক্ত ব্যক্তিদের আটক করার পর কুহালং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ মিজানুর রহমান বিপ্লব তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘটনাটি ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করে লিখেন- ‘এরা পাখি শিকার করার জন্য গেছে। তাদেরকে আমরা ছোটোবেলা থেকে চিনি, তারা পাহাড়ি এরকম কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত না।’

More From Author

+ There are no comments

Add yours