হিল ভয়েস, ২১ নভেম্বর ২০২৫, চট্টগ্রাম: ‘আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করুন, পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসুন’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম বন্দর থানায় রেশমী কমিউনিটি সেন্টারে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগরের বন্দর থানা শাখা, ইপিজেড থানা শাখা, পতেঙ্গা থানা শাখা, চাঁন্দগাও থানা শাখা, নিউমুরিং ইউনিট কমিটি, মাইলের মাথা ইউনিট কমিটি, বন্দরটিলা ইউনিট কমিটি ও বোর্ড স্কুল ইউনিট কমিটি এবং আদিবাসী মহিলা ফোরাম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত কাউন্সিল ও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক এস জে চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জগৎ জ্যোতি চাকমা, একই কমিটির সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হ্লামিও মারমা, আদিবাসী মহিলা ফোরামের সভানেত্রী চিজিপুদি চাকমা।
এই সময় পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম বন্দর থানা শাখার বিদায়ী কমিটি সুজন চাকমা সভাপতিত্বে উক্ত কাউন্সিল ও সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন রাসেল চাকমা ও সোনাবি চাকমা। সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যান ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ চাকমা।
শুরুতে উক্ত আলোচনা সভায় পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম বিভিন্ন থানা ও ইউনিট কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি বক্তব্য প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় এস জে চাকমা বলেন, আমাদের অস্তিত্ব আজ সংকটে। রাষ্ট্র তথা শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে। তরুণ সমাজকে এই বিষয়ে গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের লড়াই অসম। আমাদের লড়াই সংগ্রাম একটি জাতি বা একটি গোষ্ঠী ভিতরে সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের লড়াই সংগ্রাম সকল নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত ও বঞ্চিত অধিকারহারা মানুষের জন্য। আমাদেরকে পাহাড়ের সমস্যাকে গভীরে গিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। শাসকগোষ্ঠী দিন দিন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। সুতরাং ছাত্র ও যুব সমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অধিকতর লড়াইয়ে সামিল হওয়ার সময় উপস্থিত হয়েছে।
অনিল বিকাশ চাকমা বলেন, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম জন্মলগ্ন থেকেই জুম্ম জনগণ তথা মেহনতি মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তরুণদের বুঝতে হবে সেই সাথে নিজেদের অধিকারের প্রতি সচেতন হতে হবে। তারুণ্য শক্তিকে যদি ঐতিহাসিকভাবে কাজে না লাগাতে পারি তাহলে আমরা ব্যর্থ হবো। সকলকে নিজের অধিকারের জন্য এগিয়ে আসতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য যা যা করার প্রয়োজন সেটা করতে হবে।
জগৎ জ্যোতি চাকমা বলেন, শাসকগোষ্ঠী ও রাষ্ট্র আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এটা আজকের নয়. সেই বাংলাদেশ স্বাধীন পর থেকে। এই শাসন শোষণ নির্যাতন নিপীড়ন থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় সেই রাস্তা খুঁজতে হবে এই তরুণ প্রজন্মকে। তরুণের যে শক্তি সেই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে, অধিকার নিয়ে ভাবতে হবে সচেতন হতে হবে, অন্যথায় আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
হ্লামিও মারমা বলেন, আত্মনিয়ন্ত্রাণাধিকার প্রতিষ্ঠা লড়াই সংগ্রামে তরুণ প্রজন্ম হতাশ হলে চলবে না, আমাদেরকে লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হবে। দীর্ঘ চব্বিশ বছরের অধিক সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে আমাদের প্রবীণ প্রজন্ম আর আমরা হলাম তাদের উত্তরসুরী। তাঁরা রাষ্ট্রকে চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে আর আমাদের কে সেই চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করতে হবে রাষ্ট্রকে।
চিজিপুদি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ‘ভাগ করো-শাসন করো’ নীতিতে প্রতিনিয়ত নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে শাসকগোষ্ঠী তথা রাষ্ট্র যন্ত্র। তরুণ প্রজন্মকে নিজের অধিকারের জন্য এগিয়ে আসতে হবে এবং পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে অধিকতর সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে নবনির্বাচিত সকল শাখা কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা।
+ There are no comments
Add yours