হিল ভয়েস, ২৬ মে ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: অতিসম্প্রতি চট্টগ্রামে পুলিশ কর্তৃক উদ্ধারকৃত ২০ হাজার ৩০০ খানা সামরিক পোশাক (ইউনিফর্ম) সত্যিই কি কেএনএফের বা কেবল কেএনএফের? নাকি আরসা’র (আরাকান রোহিঙ্গ্যা স্যালভ্যাশন আর্মি)? কিংবা আরসা, আরএসও (রোহিঙ্গ্যা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) ও কেএনএফের? এই প্রশ্ন আজ অনেকের।
অনেকে মনে করছেন, এত ব্যাপক পরিমাণ ইউনিফর্ম জনসংখ্যায় অল্প কেএনএফের নয় বা হলেও কেবল কেএনএফের হতে পারে না। তাদের অভিমত, এইসব ইউনিফর্ম মিয়ানমারের আরাকানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে আরসা বা আরএসও’র জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মে ২০২৫ চট্টগ্রামের পুলিশ গভীর রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস নামক কারখানা থেকে এই পোশাকগুলো জব্দ করে এবং একই সাথে উক্ত পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিন বাঙালিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উক্ত ঘটনাটি দৈনিক সমকাল সহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় গতকাল ২৫ মে ২০২৫। উক্ত সংবাদে মংহ্লাসিং মারমা প্রকাশ ওরফে মং নামের এক ব্যক্তি কেএনএফের পক্ষে ২ কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার দেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
উক্ত সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এত ব্যাপক পরিমাণ ইউনিফর্ম কেএনএফের হতে পারে না। তারা সংখ্যায় বড়জোড় ১শ হতে ২শ হতে পারে। সমগ্র বম জনগোষ্ঠীও মাত্র ১৩ হাজারের মত। তাছাড়া বম জনগোষ্ঠীর লোকজন একই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন যে, তাদের কারোর পক্ষে এই ইউনিফর্ম অর্ডার দেওয়া সম্ভব নয় এবং এমনকি জেলেবন্দি নারী-শিশু সহ সাধারণ বমদের মুক্তির জন্য কোনো আইনজীবীর সাথেও যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে জানায় একটি সূত্র।
অপরদিকে একাধিক সূত্র জানায়, এইসব জব্দকৃত ইউনিফর্ম আরসার অথবা আরসা ও আরএসও উভয়ের জন্যই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সূত্র জানায়, আরাকানে সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর থেকে বান্দরবানে কিছু কিছু এলাকায় বিশেষ করে আরসার ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেসব এলাকায় জনসাধারণের চলাচল তো দূরের কথা, সাংবাদিকদের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেনাপ্রশাসন। সেখানে কী চলছে তা সম্পূর্ণ আড়াল করে রেখেছে সেনাবাহিনী।
সূত্র আরও জানায়, আরসা ও আরএসও-এর মধ্যে পূর্বে সশস্ত্র সংঘাত হলেও, বর্তমানে তাদের মধ্যে কোনো হানাহানি নেই। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার এর উদ্যোগে উক্ত দুই সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠনের মধ্যে একটা সমঝোতা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের লেমুছড়ি, বাহির মাঠ, পাইনছড়ি, কুরিক্ষ্যং সীমান্ত এলাকা, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আমতলীর মাঠ, হামিদিয়া পাড়া, আশার তলী, জামছড়ি, ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, ভাজাবনিয়া, গর্জন বনিয়া সীমান্ত এলাকা ইত্যাদি এলাকায় আরসার তৎপরতা জোরদার হয়েছে। তবে এসব এলাকায় আরসার স্থায়ী ক্যাম্প নেই এবং তাবু টাঙিয়ে অবস্থান করে, ঘুরে ঘুরে স্থান পরিবর্তন করে অবস্থান করে কার্যক্রম চালায় বলে জানায় সূত্রটি।
অপরদিকে, রোহিঙ্গাদের আরেকটি সশস্ত্র দল আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নে ২৭৭নং ক্রোক্ষ্যং মৌজার আলিয়ানঝিরি নতুন চাকপাড়া গ্রামের ক্রোক্ষ্যং চাকপাড়া বনে এবং ২৭৪নং দোছড়ি মৌজার ওয়াছাখালী ঝিরি আগার গহীন জঙ্গলে। সেখানে তারা দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে জানা যায়।
সূত্রে আরও জানা যায়, এখন চট্টগ্রামের বিভিন্ন গার্মেন্টসে এমডিসহ বিভিন্ন উচ্চপদে রোহিঙ্গারা চাকরি করছে। স্থানীয়দের ধারণা, যেখানে কাপড় ইউনিফর্ম পাওয়া গেছে, সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকৃত ঠিকানা বা তাদের বায়োডাটা পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে আসলে কারা এই ইউনিফর্মগুলো অর্ডার দিয়েছিল।
এছাড়া দেখা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে যে ইউনিফর্মগুলো জব্দ করা হয়, সেগুলোর সাথে ইতোমধ্যে আরসার সশস্ত্র সদস্যদের কর্তৃক ব্যবহৃত ইউনিফর্মের প্রায় হুবহু সাদৃশ্য রয়েছে। তবে, কেএনএফের কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া জঙ্গী সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’এর সদস্যদের পোশাকের সাথেও মিল রয়েছে। অপরদিকে, কেএনএফের বর্তমান ইউনিফর্ম এর মিল রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম এর সাথে।