হিল ভয়েস, ২২ অক্টোবর ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: গুয়াহাটি হাইকোর্ট ০৫/০৯/২০২৪ তারিখের তার ৬৯ পৃষ্ঠার রায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে (পিসিজেএসএস) (মূলদল), যা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন, ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মর্মে সুহাস চাকমা (যার বাংলাদেশী নাম বোধিমিত্র চাকমা) উল্লাস প্রকাশ করে তার ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস সম্পর্কে গৌহাটি হাইকোর্টের রায়ে যে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করার সুহাস চাকমা দাবি করছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া ও বিকৃত। প্রকৃত পক্ষে ২০১৩ সালের উক্ত মামলায় অস্ত্রসহ মিজোরামে লেংপুই এলাকায় মনি ত্রিপুরা, রবি চাকমা ও সবুজ চাকমা নামে যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তারা পিসিজেএসএস মূলদল বা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএসের সদস্য নন। তাদের মধ্যে দুইজন হচ্ছেন পিসিজেএসএস (এমএন লারমা) দলের এবং একজন হচ্ছেন ইউপিডিএফ দলের।
যেমন মনি ত্রিপুরা, তার আসল নাম উদয় কিরণ ত্রিপুরা, তিনি হচ্ছেন পিসিজেএসএসের (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সদস্য। রবি চাকমা, তার আসল নাম রূপেন্টু চাকমা (মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি), তিনি হচ্ছেন ইউডিপিএফের একজন সিনিয়র সদস্য ও অস্ত্র সংগ্রাহক। আর সবুজ চাকমার আসল নাম হচ্ছে অংশুমান চাকমা, তিনি হচ্ছেন পিসিজেএসএসের (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। সেসময় পিসিজেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফের মধ্যে ছিল লেজে-গোবরে সম্পর্ক। সেই অস্ত্রগুলো তারা দুইদলেই সংগ্রহ করছিল। কাজেই অস্ত্র চালানের সাথে মূলদল বা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএসের জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। পিসিজেএসএস (এমএন লারমা) সম্পর্কে তথ্য বিকৃত করে মনগড়াভাবে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস বলে চালিয়ে দিচ্ছেন সুহাস চাকমা।
এছাড়া সুহাস চাকমা আরেকটি একতরফা বক্তব্য দিয়েছেন, তা হলো পিসিজেএসএস’কে হাইকোর্টের রায়ে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা। হাইকোর্টের রায়ে পিসিজেএসএস’কে যত না ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তার থেকে বেশি আখ্যায়িত করা হয়েছে Insurgent Outfit বা ‘বিদ্রোহী দল’ হিসেবে। অথচ তথ্য বিকৃতকারী ও মিথ্যাবাদী সুহাস চাকমা এই বিষয়টি সম্পূর্ণ আড়াল করে গেছেন। এমনকি উক্ত হাইকোর্টের রায়ে উক্ত পিসিজেএসএস সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘A faction of Shanti Bahini Organization formed for upliftment of Chakma people in Bangladesh.’ (দেখুন পৃষ্ঠা ৩)। চাকমা জনগোষ্ঠীর উন্নতির জন্য এই পিসিজেএসএস সংগঠনটি গঠিত হয়েছে বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাবাজ ও দুর্নীতিবাজ সুহাস চাকমা পিসিজেএসএস সেই মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে দেখেও না দেখার ভান করে আড়াল করে গেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পূর্বে পিসিজেএসএসের অর্থায়নে দিল্লীর মতো রাজধানীতে সুহাস চাকমা শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ করার পর তিনি ধীরে ধীরে পিসিজেএসএসের সাথে বেঈমানী করতে শুরু করেন। পরে ইউপিডিএফের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে এখন রাজনৈতিক কায়েমী স্বার্থে পিসিজেএসএসের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রোপাগান্ডায় নেমেছেন।
মূলত রাজনৈতিক কায়েমী স্বার্থেই গৌহাটি হাইকোর্টের রায়ে পিসিজেএসএস (এমএন লারমা) সম্পর্কে বলা কথাগুলো মূলদল বা সন্তু লারমার পিসিজেএসএস’কে গুলিয়ে দিচ্ছেন সুহাস চাকমা। সেই সাথে সেই মামলার সাথে মাদক দ্রব্যের সংশ্লিষ্ট না থাকলেও মূলদল পিসিজেএসএস’কে মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত করে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মনগড়া অভিযোগ তুলেছেন সুহাস চাকমা।
রাজনৈতিক কায়েমী স্বার্থ হাসিল করার জন্য সুহাস চাকমা ২০২৫ সালের ১৯ জুন আসাম রাইফেলস কর্তৃক জব্দ করা ১০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য আটকের ঘটনার সাথে পিসিজেএসএস জড়িত বলে সুহাস চাকমা দাবি করেন, যা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। সেই মাদকদ্রব্য আটকের ঘটনা সম্পর্কে ডজন খানেক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। একমাত্র Northeast News নিউজপোর্টাল ব্যতীত অন্য কোন পত্রিকায় উক্ত মাদক পাচারের ঘটনায় পিসিজেএসএস জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়নি।
এখানে বলা নিষ্প্রয়োজন যে, সুহাস চাকমা কায়েমী স্বার্থান্বেষী প্রোপাগান্ডা খেলায় Northeast News হয় অজান্তে সামিল হয়েছে, না হয় উক্ত প্রোপাগান্ডার সুবিধাভোগী হয়েছে। এছাড়া মিজোরামের পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তেও পিসিজেএসএস জড়িত থাকার সত্যতা মেলেনি। অথচ সুহাস চাকমা উক্ত মাদক ঘটনায় ধৃত তিনজন চাকমা পিসিজেএসএসের সহযোগী বলে বানোয়াট ও মনগড়া প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এভাবেই গৌহাটি হাইকোর্টের রায়ে পিসিজেএসএস সম্পর্কে ও মাদকের ঘটনায় পিসিজেএসএস জড়িত বলে সুহাস চাকমা অনবরত মিথ্যাচার করে চলেছেন। নিজেকে মানবাধিকার কর্মী দাবি করা সুহাস চাকমার এধরনের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অনৈতিক বলে বিবেচনা করা যায়।