গাইবান্ধায় আদিবাসী সাঁওতাল জনগণের উপর ভূমিদস্যুদের হামলা, গুরুতর আহত ৩

হিল ভয়েস, ১৮ আগস্ট ২০২৫, গাইবান্ধা: গত ১৫ আগস্ট ২০২৫ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় একদল ভূমিদস্যু কর্তৃক আদিবাসী সাঁওতাল জনগণ হামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই হামলায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অন্তত ৩ ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।

জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম নামের এক ভূমি বেদখলকারী ভূমির দলিল জাল করে শ্যামবালা হেমব্রম (৩৬) এর পিতা এবং তার চাচা নড হেমব্রম এর বৈধ মালিকানাধীন ভূমি বেদখল করেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ শ্যামবালা হেমব্রম যখন এই অবৈধ ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা আদালতে (রাজস্ব) একটি মামলা দায়ের করেন, তখন আদালত শ্যামবালা হেমব্রম এর দাবির সত্যতা খুঁজে পায় এবং ৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ রফিকুল ইসলামের ভূমি দলিল ভূয়া ও ভিত্তিহীন বলে ঘোষণা করেন। তখন থেকে ভুক্তভোগী প্রকৃত মালিকরা উক্ত জমিতে চাষবাদ করে আসছেন।

উল্লেখ্য, ঘটনার দিন বিকাল ৩টার দিকে শ্যামবালা হেমব্রম, বিশ্বনাথ সরেন, জয়ন্ত হাসদা ও মিনতি সরেন তাদের জমিতে ধান রোপণ করছিলেন। ঐ সময় রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভূমি বেদখলকারীদের ২৪ জনের একটি দল জমিতে প্রবেশ করে এবং ভুক্তভোগীদের ধান রোপণ বাধা প্রদান করে। এসময় শ্যামবালা হেমব্রম প্রতিবাদ করলে, মেসবাউল ইসলাম তাকে লাঠি দিয়ে হামলা করে এবং শফিকুল, গোলাপ, রহিম বাদশা ও সুমন নির্বিচারে লাঠি মারে। পরে রহিম বাদশা ইচ্ছাকৃতভাবে যৌন নিপীড়নের উদ্দেশ্যে শ্যামবালা হেমব্রম এর শাড়ি ও ব্লাউজ ছিঁড়ে ফেলে।

ঘটনাটি দেখে সৈলাশ সরেন, বিশ্বনাথ সরেন ও জয়ন্ত হাসদা এগিয়ে আসলে, রফিকুল ইসলাম হত্যার উদ্দেশ্যে দেশি তৈরি চাকু দিয়ে বিশ্বনাথ সরেনকে হামলা চালায়। একই সময়ে অন্যান্য ভূমিদস্যুরাও জয়ন্ত হাসদা ও সৈলাশ সরেনকে হামলা চালায়। ফলে হামলার শিকার সবাই গুরুতর আহত হন।

ইতোমধ্যে স্থানীয় জনগণ এগিয়ে আসলে, ভবিষ্যতে ঐ ভূমিতে ভুক্তভোগীরা যদি চাষাবাদ করে তাহলে তাদেরকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যায়।

ঘটনার পর শ্যামবালা হেমব্রম ও জয়ন্ত হাসদাকে গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। তবে বিশ্বনাথ সরেনকে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মাথায় হামলার কারণে বিশ্বনাথ সরেনের মাথার পেছনে ৬ সেলাই দেয়া হয়।

উক্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা হলেন- (১) জোয়াস মুর্মু, পীং-মৃত সুরুজ মুর্মু, (২) ফিলোমিনা হাসদা, পীং-ভন্ডা হাসদা, (৩) জুলিয়াস সরেন, পীং-মৃত সুন্দর সরেন, (৪) মিখাইল হাসদা, পীং-মৃত খোকা হাসদা, (৫) ব্রিটিশ সরেন, পীং-মৃত সুন্দর সরেন, (৬) মাখন মার্ডি, পীং-মৃত শোবন মার্ডি, (৭) মেরি সরেন, পীং-মৃত খ্রিস্টোফার সরেন এবং আরও অনেকে।

ভুক্তভোগীদের পরিচয়- (১) শ্যামবালা হেমব্রম, পীং-হপনা হেমব্রম, ঠিকানা- বিরাট ভারত, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, (২) বিশ্বনাথ সরেন, মাতা-শ্যামবালা হেমব্রম, (৩) জয়ন্ত হাসদা ও (৪) সৈলাশ সরেন।

স্থানীয়রা জানান, তারা অন্তত ১৫ জন হামলাকারীকে চিনতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় হল- (১) মো: রফিকুল ইসলাম (৪৮), (২) মো: শফিকুল ইসলাম (৪৪), (৩) মো: মেসবাউল ইসলাম (৪০), পীং-মো: হাকিম মন্ডল, (৪) মো: হাকিম মন্ডল (৬৫), পীং-মৃত আজিম উদ্দিন, (৫) মো: গোলাপ (৫০), পীং-মৃত আবদুল গনি, ঠিকানা-ধনিয়াল ছাপড়াপাড়া।

গত ১৭ আগস্ট ২০২৫ ভুক্তভোগী শ্যামবালা হেমব্রম তার ভাইপো মিখাইল এর মাধ্যমে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়নি। অপরদিকে, হামলাকারীরা উল্টো ভুক্তভোগীরা তাদের উপর হামলা করেছেন বলে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে জানা গেছে।

More From Author

+ There are no comments

Add yours