খাগড়াছড়ির গুইমারাতে গুলিবর্ষণে নিহতদের স্মরণে ঢাকায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

হিল ভয়েস, ৬ অক্টোবর ২০২৫, ঢাকা: আজ ৬ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ৪ ঘটিকার সময়ে খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা ও সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে নিহতদের স্মরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দেলনের উদ্যোগে ঢাকার শাহবাগ প্রাঙ্গণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন আয়োজন করা হয়।

এই সময়, খাগড়াছড়িতে একজন মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে ৩ জন নিহত ও অন্তত ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে মর্মে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দ্রুত হস্তক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

চলমান পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন কর্তৃক নিম্নোক্ত আন্দোলন ঘোষণা করা হয়:

১. পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি জাতীয় সমস্য। এই সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পাহাড় প্রায় সময় অশান্ত হয়ে উঠে। খাগড়াছড়ি ও গুইমারাতে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলী তারই একটা জলন্ত দৃষ্টান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সমস্যার সমাধানের উপায় চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। তাই পাহাড়ের সমস্যা জিইয়ে না রেখে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেশের সকল রাজনৈতিক পক্ষসমূহ ও সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে সাথে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে একটা জাতীয় সংলাপ জরুরি। আশাকরি, অন্তর্বর্তী সরকার এই জাতীয় সংলাপ দ্রুতই আয়োজন করবে। এছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষ থেকেও একটি সংলাপের আয়োজন করা হবে;

২. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট কোন প্রক্রিয়ায় জনসম্মুখে চলে এলো, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই বিষয়ে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদানের দাবি করছি। সেই সাথে ধর্ষিত কিশোরীর পিতা মেডিকেল রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টিও আমরা জেনেছি। আমরা এই বিষয়ে কিশোরীর পিতার বক্তব্য আমলে নিয়ে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানাই এবং সেই সাথে নির্যাতিত কিশোরী এবং তাঁর পরিবারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী উত্থাপন করছি;

৩. খাগড়াছড়ির সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের ঘটনাবলীর বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের জন্য নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি যুক্ত করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে;

৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, সেই সাথে হত্যার শিকার হওয়া প্রতিটি পরিবারকে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে;

৫. পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পরিহার করে সিভিল প্রশাসনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে;

৬. পাহাড়ের ঘটনাবলী সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা এবং স্থানীয় ভুক্তভোগীদের আন্দোলন সংগ্রাম যাতে দমন করা না হয়, সেজন্য অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে;

৭. সর্বোপরি সময়সূচীভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করে পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।

More From Author