হিল ভয়েস, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ঢাকা: সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলায় সহিংসতার ঘটনায় ৩ নাগরিক নিহতসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত, হামলা, গুলি, অগ্নিসংযোগ এর ঘটনায় হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মার্মা সম্প্রদায়ের একজন স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার ও ন্যায়বিচারের দাবিতে স্থানীয় তরুণেরা বিক্ষোভ, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি পালন করে আসছিল গত কয়েকদিন। এ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনরত তরুণদেরকে দমন করার চেষ্টা করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনের প্রাণহানি এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮(১) ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য, ৩১ (আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী), ৩২ (জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার- রক্ষণ), অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ধরনের পরিস্থিতি কারও জন্যই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না, বরং পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অস্থিরতা বাড়াতে পারে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো সংঘটিত প্রতিটি ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। যে কোনো যৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন বা প্রতিবাদ হতে পারে, তবে তা কখনোই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে বাধা প্রদানের চেষ্টা বা সহিংসতার রূপ নিতে পারে না। একইভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব হলো সংযত, দায়িত্বশীল ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করা, যাতে করে বেসামরিক জীবনের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে না ফেলে ।
এইচআরএফবি’র বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সহিংসতা, উসকানি ও সংঘাতমুখী আচরণ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ ও প্রচলিত আইনের ভেতরে থেকে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং নাগরিক অধিকারের সুরক্ষাই বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে একটি কার্যকর পথ হতে পারে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করা, উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) সরকারের প্রতি আহ্বান করেন, অনতিবিলম্বে একটি পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা। যাতে ঘটনাগুলোর প্রতিটি দিক নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে উন্মোচিত হয় সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া।
একই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর জন্য দ্রুত ন্যায়বিচার ও পরিবারসহ তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সহিংসতায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সকলের ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ পারিবারিক নিরাপত্তা ও আহতদের যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা দেওয়া।
বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ এর স্বাক্ষরকৃত সদস্যবৃন্দ
১। ড. হামিদা হোসেন,২। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ৩। রাজা দেবাশীষ রায়, ৪। অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ৫। শাহীন আনাম, ৬। জাকির হোসেন, ৭। সারা হোসেন, ৮। রঞ্জন কর্মকার, ৯। সালেহ আহমেদ, ১০। সঞ্জীব দ্রং, ১১। ড. ইফতেখারুজ্জামান, ১২। ডা. ফওজিয়া মোসলেম, ১৩। শামসুল হুদা, ১৪। খুশী কবির, ১৫। সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, ১৬। শিপন কুমার রবিদাস, ১৭। সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, ১৮। দেওয়ান জামান, ১৯। পল্লব চাকমা, ২০। রোকেয়া রফিক বেবী, ২১। গীতা দাস, ২২। আবদুস সাত্তার দুলাল, ২৩। আশরাফুন্নাহার মিষ্টি।