হিল ভয়েস, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, চট্টগ্রাম: খাগড়াছড়ি সদরে ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া এক জুম্ম ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের অতিদ্রুত গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকাল ৫ ঘটিকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন, ঋজু লক্ষী অবরোধ, সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা; ইফাজ উদ্দিন আহমদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন; জুহেস ত্রিপুরা, সাংগঠনিক সম্পাদক, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা; সিংয়ইপ্রু মারমা, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংস্কৃতিক উপ-কমিটি; সানু মারমা, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিটন চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমা এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন পালি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অজয় তঞ্চঙ্গ্যা।
ঋজু লক্ষী অবরোধ বলেন, নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা আমাদের কাছে অপরিচিত কোন ঘটনা নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা সংস্কারের কথা বললেও নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে আজও যথাযথ উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ফলে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মব সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে। আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশে আদিবাসীদের নায্য অধিকার দিতে পারিনি। ফ্যাসিবাদী আমলে যেভাবে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা ভূলন্ঠিত হয়েছে সেভাবেই জুলাই পরবর্তী একটা গোষ্ঠী মানুষের অধিকারকে ভূলন্ঠিত করছে। দূঃখজনক বিষয়, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মহুতির দিনে নারী ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে আমাদের।
ইফাজ উদ্দিন আহমদ ইমু বলেন, কল্পনা চাকমা থেকে শুরু করে গতকালের অষ্টম শ্রেণীর কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা পর্যন্ত পাহাড়ের নারী নির্যাতনমূলক ঘটনার একটিরও যথাযথ বিচার এই রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। বর্তমান সরকারের আমলেও আগের মতই আদিবাসীদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। ঐক্যমত্য কমিশনেও কোন আদিবাসী প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চিংমা খেয়াংকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হলেও এখনো তার বিচার রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি।
জুহেস ত্রিপুরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ধর্ষণের মতো ঘটনাকে আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনা। বৈচিত্র্যতাকে স্বীকার করে বাংলাদেশের অর্ন্তরবর্তী সরকারের উচিত সকল জাতিগোষ্ঠীর অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাহাড়ে নারী নিরাপত্তার জন্য সংঘটিত ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সিংয়ইপ্রু মারমা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা ভেবেছিলাম এখানে বৈষম্য থাকবে না, নিপীড়ন থাকবে না, নারী ধর্ষণ থাকবে না। কিন্তু তার বিপরীতে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে চললেও প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কথিত নিরাপত্তার নামে পাহাড়ে সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে। কিন্তু আমার মা-বোনদের নিরাপত্তা তারা নিশ্চিত করতে পারছে না। তাহলে এই নিরাপত্তা কাদের জন্য প্রশ্ন থেকে যায়। এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা যথাযথ নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রাখি।
সানু মারমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে প্রত্যেকটি নারী নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে নারীদের অধিকতরভাবে এগিয়ে আসা উচিত। এক একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা আবশ্যক।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে অজয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ৭০ এর দশক থেকেই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমতল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্যাটেল করা বাঙালীদের কর্তৃক পাহাড়ি নারী ধর্ষণ, হত্যা এবং নিপীড়ন সংঘটিত হতে দেখা যায়। নারী নিরাপত্তাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার।
সমাবেশ পরবর্তীতে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার চত্বর ঘুরে আবার জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়।
+ There are no comments
Add yours