হিল ভয়েস, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, আন্তর্জাতিক: সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় এক মারমা স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ এবং উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে আহুত অবরোধ পালনকালে জুম্ম ছাত্র-জনতার উপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ ও সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের শাস্তি সহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আরাকান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। সংগঠনটির পক্ষে এই বিবৃতি দেয় প্রধান সমন্বয় কমিটি।
বাংলায় সংস্করণকৃত এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলায় ১২ বছর বয়সী মারমা জাতিগোষ্ঠীর অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বাংলাদেশি নাগরিক তিন জন মিলে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ন্যায়বিচারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদরত ছাত্র-যুবক ও সাধারণ মানুষদের উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে দমন করে এবং জনসাধারণের সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদরত সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-যুবকদের উপর সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের গুলিবর্ষণ ও হামলার ফলে অন্তত ৪ জনের মৃত্যু এবং ১০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
এ ধরনের নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুধু এই প্রথম নয়; বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এমন ঘটনা ঘটছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণ ইতিহাস জুড়ে নানান দমন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস শান্তিচুক্তি হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘তদুপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাখাইন জনগোষ্ঠী সহ অন্যান্য অসমুলিম জাতিগোষ্ঠীর নারী ও শিশুদের মানবাধিকার লংঘন, জোরপূর্বক ভূমি দখল, ধর্মীয় নিপীড়ন, উপাসনালয় ধ্বংস ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমান ঘটনায় দেখা যাচ্ছে যে, আদিবাসী নারী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ জোরপূর্বক ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, আর এসব মানবাধিকার লংঘনের পেছনে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ইসলামি চরমপন্থী মতাদর্শের প্রভাব রয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং জাতিসংঘের আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অনুযায়ী আদিবাসীদের অধিকারকে সম্মান করতে হবে। জাতিসংঘের আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র-এর ৩০নং অনুচ্ছেদ অনুসারে পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে এবং ৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পার্বত্য জনগোষ্ঠীন সম্মান, অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে মর্যাদা দিতে হবে।’
আরাকান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-এর ১০টি দাবি নিম্নরূপ:
১। ধর্ষণকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তি প্রদান;
২। পার্বত্য এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার,
৩। পার্বত্য এলাকায় সামরিক শাসন না চালানো,
৪। ছাত্র-যুবকদের হুমকি ও হয়রানিতে জড়িত কর্মকর্তাদের আইনি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা,
৫। ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এখনো পলাতক দুই অপরাধীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা,
৬। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত ধর্ষণ ও সহিংস হামলার তদন্তের জন্য ৩০ দিনের মধ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন,
৭। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, দোকান ও গৃহস্থালি সামগ্রীর পূর্ণ ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা,
৮। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ভাঙচুরে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত জুম্ম ব্যবসায়ীদের পূর্ণ ক্ষতিপূরণ প্রদান,
৯। সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে সংলাপ আয়োজন
১০। ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার।
এই সমস্ত দাবিকে মিত্র সংগঠনসমূহ পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।