কারাগারে আটক গুরুতর অসুস্থ শিউলি বম-এর অবিলম্বে মুক্তির দাবি

হিল ভয়েস, ৯ আগস্ট ২০২৫, বান্দরবান: আজ ৯ আগস্ট ২০২৫, রবিবার, বম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম ও সাধারণ সম্পাদক রবেন বম এক যৌথ বিবৃতিতে কারাগারে আটক গুরুতর অসুস্থ শিউলি বম এর অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, বম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছে যে, ২১ বছরের তরুণী শিউলি বম, যিনি দীর্ঘদিন ধরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিনা বিচারে আটক আছেন এবং নিয়মিত চিকিৎসা ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা স্পষ্টতই জেল হেফাজতে তাকে অমানবিক পরিবেশে, চিকিৎসা সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় রাখা হয়েছে যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

২১ বছরের তরুণী শিউলি বম ছোটবেলা থেকেই নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগেছেন। ২০১৬ সাল থেকে তার অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২২ সালে বান্দরবান হাসপাতালে মাসখানেক ধরে ভর্তি থাকার সময় তাঁকে ৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। শিউলি বম থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হিসেবে ডাক্তাররা চিহ্নিত করেন এবং নিয়মিত চিকিৎসা এবং ভালো খাবার খাওয়া ছাড়া তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটবে বলে জানান। অসুস্থ শিউলি চিকিৎসার জন্য ৭ মার্চ ২০২৪ তারিখ রুমা উপজেলার বেথেল পাড়ায় তার আত্মীয়ের বাড়িতে যান।

৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে যৌথবাহিনী বেথেল পাড়ায় গণগ্রেফতার চালালে বাকি আরো ৪৮ জন বম সাধারণ নাগরিকের সাথে শিউলি বমও (২১) গ্রেফতারের শিকার হন। গ্রেফতারের পর গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে বিনা বিচারে বন্দি থেকে তিনি নিয়মিত চিকিৎসা এবং পুষ্টি খাবার থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত । আটক করার পরপর তার মামা সাংতুয়ার বম একবার দেখা করতে পারলেও প্রায় দেড় বছরের মধ্যে চেষ্টা করেও তার সাথে দেখা করতে পারেনি পরিবারের কেউ।

সম্প্রতি টানা তিন সপ্তাহ ধরে তাঁর জ্বর ও মারাত্মক দুর্বলতা দেখা দিলেও, দীর্ঘদিন ধরে কারা কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি। অবশেষে ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট অক্সিজেন দেওয়ার পর ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে আমরা কারাগারে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্তত তিনজন বম নাগরিককে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি যার মধ্যে ভান লাল রোয়াল বম (৩৫) -এর মৃত্যুই সবচেয়ে সাম্প্রতিক।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, শিউলি বমের এই শারীরিক অবস্থার মধ্যেও তার জামিন নামঞ্জুর করেই যাচ্ছে আদালত। রাষ্ট্র কি শিউলির জীবন নিয়েও একই পরিণতির অপেক্ষা করছে ? এটি শুধু একজন তরুণীর জীবন সংকট নয়, বরং রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষার ওপর একটি গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন। শিউলি বমের জামিন নামঞ্জুর অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও অগ্রহণযোগ্য। এই দেশের নাগরিক হিসেবে ন্যায়বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত এবং গণতান্ত্রিক বিচার ব্যবস্থার পরিপন্থী।

বম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, অবিলম্বে শিউলি বম এর জামিন মঞ্জুর করে মুক্তি দিন। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। উক্ত প্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারাগার কর্তৃক একের পর এক মৃত্যু ঘটনায় ঘটবে যা রাষ্ট্রের উদাসীনতা ও নীরবতা কোনো ভাবে কাম্য নয়।

আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, গণমাধ্যম এবং ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী সকল নাগরিককে এই অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।

More From Author

+ There are no comments

Add yours