হিল ভয়েস, ২৭ জুলাই ২০২১, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই ইউনিয়ন ও রাইখালী ইউনিয়ন এলাকা থেকে পৃথক দুটি ঘটনায় জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর এক কর্মীসহ তিন নিরীহ জুম্মকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে আটকের পরপরই ‘সেনামদদপুষ্ট অনলাইন মাধ্যম’ হিসেবে পরিচিত পার্বত্যনিউজ.কম-এ আটককৃতদের সবাইকে জেএসএস’র চাঁদা সংগ্রহকারী হিসেবে এবং তাদের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে বলেও মিথ্যা ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
সেনাবাহিনী কর্তৃক এভাবে নিরীহ ব্যক্তিদের আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা এবং অপপ্রচারের ঘটনায় আটককৃতদের পরিবারের লোকজন গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৬ জুলাই ২০২১, রাত ১২.০০-১.০০ টার দিকে কাপ্তাই সেনা জোন ২৩ ইস্ট বেঙ্গল (ডেয়ারিং টাইগার্স) এর অধীন গবঘোনা সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মাহাবুব ও এস ব্যান সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার সুবেদার রিয়াজের নেতৃত্বে¡ একদল সেনা সদস্য কাপ্তাই ইউনিয়নের গুরোছড়ি ও হরিণছড়া এবং রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন জীবতলী ইউনিয়নের লাঙলমারা সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে সন্ত্রাসী খোঁজার নাম করে তল্লাশি অভিযান চালায়।
সেনাদলটি এই সময় গুরোছড়ি গ্রামের বাসিন্দা সনাধন চাকমা (৩৭), পীং-তাত্ত্বিক চন্দ্র চাকমা ও শিশু বিকাশ চাকমা (৪৭), পীং-মদন মোহন চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে তাদের দুইজনকে বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এরপর সেনাদলটি সনাধন চাকমা ও শিশু বিকাশ চাকমাকে আটক করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, আটককৃত শিশু বিকাশ চাকমা জনসংহতি সমিতি’র কাপ্তাই ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার রিতা তঞ্চঙ্গ্যার স্বামী।
অপরদিকে সনাধন চাকমা কোন রাজনৈতিক দল ও কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত নয় পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।
শিশু বিকাশ চাকমা ও সনাধন চাকমার মিথ্যা মামলা থাকায় তারা দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন বলে জানা যায়।
এছাড়াও উক্ত সেনাদলটি পার্শবর্তী জীবতলী ইউনিয়নের লাঙলামারা গ্রামের দীপক চাকমা, পীং-দীনময় চাকমার বাড়িতেও ব্যাপক তল্লাশী চালায়, মূল্যবান জিনিসপত্র তছনছ করে দেয় এবং বাড়ির লোকদের হয়রানিমূলক জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে খবর পাওয়া যায়।
জানা গেছে, রাত ৩:০০ টার দিকে সেনা সদস্যরা ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সময় দীপক চাকমার দুই বোন জুলি চাকমা (১৭) ও রুবিনা চাকমা (১৫)-কে ও রুপ্পো চাকমা, পীং-সুন্দর মোহন চাকমা, গ্রাম-ধুল্যাছড়ি নামের তিন কিশোরীকে সকালে ক্যাম্পে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা যদি ক্যাম্পে না যায় তাহলে তিনজনের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হবে বলে সেনা সদস্যরা হুমকি দিয়ে যায়।
অপরদিকে, একই দিন রাত আনুমানিক ১১.৩০ টার দিকে সেনাবাহিনীর কাপ্তাই সেনা জোনের অধীন রাইখালী টেম্পোরারি অপারেটিং বেস (টিওবি) এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো: নাজমুল হকের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য একই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ভালুক্যে পাড়া থেকে সমর বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) নামে এক নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করে। সমর বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা পেশায় ভাড়াটে মোটর সাইকেল চালক ও কৃষিজীবী। তার নামে কোনো মামলা নেই বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, উক্ত তিন নিরীহ ব্যক্তিকে আটকের পর পরই সেনাবাহিনী আটককৃত সবাইকে জেএসএস’এর চাদা আদায়কারী হিসেবে উল্লেখ করে এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে প্রচার করার খবর পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি সেনামদদপুষ্ট পার্বত্যনিউজ.কম-এ এই খবরটি প্রকাশ করা হয়।
এ ব্যাপারে আটককৃতদের পরিবারের সদস্য ও কয়েকজন গ্রামবাসীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আটককৃত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই নিরস্ত্র ও নিরীহ ব্যক্তি। তারা চাঁদা সংগ্রহকারী নয় এবং তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সেনাবাহিনী তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই এই নিরীহ ব্যক্তিদের আটক করে এবং তারা চাঁদা আদায়কারী ও তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৭ জুলাই ২০২১, বিকাল ২:৩০ টার দিকে আটককৃতদের কাপ্তাই থানায় পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে খবর পাওয়া গেছে।
 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
             
             
                             
                             
                             
                                                     
                                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        