কক্সবাজারে মুসলিম বাঙালি কর্তৃক তিন তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের সদস্যদের মারধর, লুটপাট, এক নারীর শ্লীলতাহানি

হিল ভয়েস, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, কক্সবাজার: গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল অনুমানিক ৯:০০ ঘটিকায় কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন ৫নং পালংখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত তেলখোলা (তৈয়নতুলী পাড়া) গ্রামে মুসলিম বাঙালি ইয়াছিন আলী (৪৮), পিতা-মৃত নজির হোসেন এর নেতৃত্বে ২৫/২৬ জনের অধিক একটি দল একই এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা তিন পরিবারের সদস্যদের উপর অতর্কিত হামলা, লুটপাট ও পরিবারের এক নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় শ্লীলতাহানি করে বলে জানা যায়।

ভুক্তভোগীরা হলেন, ১) সূর্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (৫০) পিতা-মৃত হাতদোবা তঞ্চঙ্গ্যা, স্থায়ী ঠিকানা: ডাইনে কাইন্দা পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ৬নং বালুখালী ইউপি, থানা- রাঙ্গামাটি সদর, জেলা-রাঙ্গামাটি,
বর্তমান ঠিকানা: তেলখোলা (তৈয়নতুলী পাড়া), ৬নং ওয়ার্ড, ৫নং পালংখালী ইউনিয়ন, থানা-উখিয়া, জেলা-কক্সবাজার;
২) রিপন তঞ্চঙ্গ্যা (২৫) , পিতা-রজু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, ৩) শান্তি রঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা (৩৪) পিতা-ধপ্পুরী তঞ্চঙ্গ্যা। অপরদিকে শ্লীলতাহানির শিকার নারীও (২২) একই গ্রামের তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের গৃহবধূ।

জানা যায়, ঘটনার ৩/৪ দিন পূর্বে ইয়াছিন আলীর পালিত একটি মহিষ তেলখোলা পাহাড়ি এলাকায় ঘাস খাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিলে কে বা কারা তার মহিষটিকে কুপিয়ে আঘাত করে। এতে মহিষটি তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন আঘাত করে বলে সন্দেহ করে এবং ইয়াছিন আলী দীর্ঘদিন ধরে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের লোকজনদের বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে আসছে।

এক পর্যায়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল অনুমানিক ৯:০০ ঘটিকায় ইয়াছিন আলীর নেতৃত্বে ২৫/২৬ জন মুসলিম বাঙালি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ধারালো দা, কিরিচ, লোহার শাবল, লাঠি, লোহার রড, অবৈধ বন্দুক ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সূর্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, রিপন তঞ্চঙ্গ্যা এবং শান্তি রঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে হামলা করে।

এই সময় সূর্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, রিপন তঞ্চঙ্গ্যা এবং শান্তি রঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা বাধা প্রদান করলে তাদের বুকে, পিঠে, মাথায়, কোমরে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত দিয়ে জখম করে। লোহার শাবলের আঘাতে রিপন তঞ্চঙ্গ্যার বাম চোখের নিচের হাড় ভেঙ্গে যায়। এইসময় ভুক্তভোগীরা চিৎকার শুনলে আশেপাশের লোকজন তাদের বাচাঁনোর উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে আসলে তাদেরকেও মুসলিম বাঙালিরা খুন করার হুমকি দেয়।

এমতাবস্থায় সূর্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যার মেয়ে (২২) বাধা প্রদান করতে গেলে তাকেও চুল ধরে টানাহেঁচড়া করে এবং পরনে থাকা কাপড় চোপড় ছিড়ে এক প্রকার বিবস্ত্র অবস্থায় শ্রীলতাহানি করে।

এক পর্যায়ে মুসলিম বাঙালিরা সূর্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, রিপন তঞ্চঙ্গ্যা এবং শান্তি রঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করতে করতে অপহরণ করে ঘটনাস্থল হতে অনুমানিক ৬/৭ কিলোমিটার দূরে ইয়াছিন আলীর বসত বাড়িতে নিয়ে যায় এবং আটক অবস্থায় সেখানেও শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে।

পরে তাদের অপহরণের খবর স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে উখিয়া থানা হতে একদল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে কৌশলে হামলাকারী মুসলিম বাঙালিরা পাহাড়ি এলাকার দিকে পালিয়ে যায় এবং একইদিন দুপুর অনুমানিক ২:০০ ঘটিকায় পুলিশের সহায়তায় ভুক্তভোগীদের জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

পরে স্থানীয়রা তাদের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।

এই সময় হামলাকারীরা সূর্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যার কলা বাগান হতে ১২০ টি কলা গাছ কেটে ফেলে, সবজি ও ধানক্ষেত নষ্ট করে ৬০,০০০/- টাকার পরিমাণ ফসল ক্ষতি সাধন করে এবং ২টি ধুসর রংয়ের গাভী (যেগুলির মুল্য ১,৪০,০০০/- টাকা), ১টি পাঠা ছাগল (মুল্য ১২,০০০/- টাকা), ৩টি ছাগী (মূল্য ৩০,০০০/- টাকা) এবং তার মেয়ে সুন্দরী তঞ্চঙ্গ্যা (২০) এর ব্যবহারের ৮ আনা ওজনের ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, নগদ ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা, এবং রিপন তঞ্চঙ্গ্যার বসত বাড়িতে থাকা ১টি ৩০ এম্পিয়ার সৌর বিদ্যুতের ব্যাটারি, ঘরে রক্ষিত থাকা নগদ ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার টাকা) নিয়ে যায়। এছাড়া রিপন তঞ্চঙ্গ্যার ঘরে থাকা মালামাল ও বৌদ্ধ আসন ভাংচুর, সবজি ও ধানক্ষেত নষ্ট করে, যার বাজার মূল্য ৮০,০০০/- টাকা।

এই ঘটনায় উখিয়া থানায় সূর্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বাদী হয়ে ১। ইয়াছিন আলী (৪৮), পিতা- মৃত নজির হোসেন, মাতা- মলকা বানু, ২। মোহাম্মদ বাবুল (২৩), পিতা- ইয়াছিন আলী, ৩। নবাব মিয়া (২৬), পিতা- পিয়ার আলী, ৪। শুকুর আলী (২৬), পিতা-মোহাম্মদ হোসেন প্রকাশ মুনিয়া, ৫। রুবেল মিয়া (২১), পিতা- মৃত ইন্না আমিন, সর্ব সাং- তেলখোলা, ৬নং ওয়ার্ড, ৬। ইউছুপ আলী (২৮), পিতা- জমির আহমদ, সাং- তেলখোলা লাল পাইন্যা, ৬নং ওয়ার্ড, ৭। মোহাম্মদ আব্দু শুক্কুর (৩৩), পিতা- ছৈয়দ আলম, শ্বশুর- ইয়াছিন আলী, ৮। রুহুল আমিন (২৮), পিতা- মৃত ইন্না আমিন, ৯। জাহাঙ্গীর আলম (২০), পিতা- মৃত সিরাজুল হক, ১০। হেলাল উদ্দিন (২৪), পিতা- মৃত ফরিদ আহমদ, ১১। আনর আলী (৪৩), পিতা- মৃত নজির হোসেন, মাতা- মলকা বানু. ১২। মোহাম্মদ রিদোয়ান (২০), পিতা-আনর আলী, সর্ব সাং- তেলখোলা, ৬নং ওয়ার্ড ও অজ্ঞাত নামা ২৫/২৬ জনকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

উল্লেখ্য এর আগেও গত ৫-৬ মাস আগে মো: হাবিউল্লা নামক ব্যক্তির মহিষকে জবাই করে নিয়ে যাওয়ার সময় এক রোহিঙ্গাকে হাতেনাতে আটক করে সেই এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমারা। পরে আটকের পর তারা মহিষের মালিক হাবিউল্লাকে খবর দিয়ে ঐ রোহিঙ্গাকে ধরিয়ে দেয়। উক্ত ঘটনার সালিসি বিচার হয় ৫নং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গোফর উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে।

জানা যায়, উক্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে এই সব সহিংস ঘটনার মদদদাতা হিসেবে এলাকার ৬নং তেলখোলা ও মোছার খোলা ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ কামাল (৩৮) পীং-বলিমোল্লাকে (বলি) দায়ী করা হয়।

More From Author

+ There are no comments

Add yours