এমরিপে আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র বিষয়ে জেএসএস প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমার বক্তব্য

হিল ভয়েস, ১৫ জুলাই ২০২৫, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক এক্সপার্ট মেকানিজমের (এমরিপ) ১৮তম অধিবেশনে এজেন্ডা “আইটেম ৫: আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক প্রতিবেদন সহ জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র” বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা তার বক্তব্য প্রদান করেছেন।

গত সোমবার (১৪ জুলাই) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ে এমরিপের ১৮তম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনটি আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অগাস্টিনা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের মনিরা ত্রিপুরা ও টনি চিরান এমরিপের এই ১৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন।

অগাস্টিনা চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, “আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে বেড়ে উঠি নাই, কিন্তু আমার জনগোষ্ঠী- জুম্ম জনগণের গল্পসমূহ কয়েক প্রজন্ম ও দূরত্ব অতিক্রম করে আমার কাছে পৌঁছেছিল। প্রাচুর্য্যপূর্ণ পাহাড়ের গল্পগুলো, পবিত্র নদীসমূহ এবং একটি প্রশান্ত গাম্ভীর্য যা কয়েক দশকের নিপীড়নকে প্রতিরোধ করে রেখেছে। কিন্তু সেই গল্পগুলোও নিরবতায় পূর্ণ হয়ে গেছে। নীরব সামরিক উপস্থিতি। ভয়ের নীরবতা। এবং একটি শান্তি চুক্তির নীরবতা, যা স্বাক্ষরিত হয়েছিল, কিন্তু কখনোই যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।”

তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বেসামরিকীকরণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের আশা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়। শান্তির বদলে, এলাকাটিকে ২০০১ সালে কার্যত সামরিক শাসন ‘অপারেশন উত্তোরন’ এর আওতায় আনা হয়। বেসমারিক কর্তৃপক্ষকে সামরিক কর্তৃত্বের অধীনে তুলে দেওয়া হয় এবং জুম্ম জনগণের জীবন অধিকতর কঠোর নিয়ন্ত্রণাধীন হয়।

অগাস্টিনা চাকমা আরও বলেন, “আমি সেনা চেকপয়েন্ট এর ব্যাপারে চাপাকন্ঠে আত্মীয়দের কথা বলতে শুনেছি। বাস্তুচ্যুতির ব্যাপারে বলতে শুনেছি। যেগুলো কখনো শিরোনাম হয়নি সেইসব সহিংসতার ব্যাপারে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা যখন বিদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে মানবাধিকারের ব্যাজ পরিধান করেন, নিজের দেশে সেই সেনাবাহিনীই আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সেই একই অধিকারগুলো লংঘন করে। বিদেশে শান্তি রক্ষাকারীদের নিজের দেশেই প্রথম শান্তিরক্ষী হওয়া উচিত। তাই আজকে কেবল আমি একটি নীতিগত অনুরোধ নিয়ে আসিনি- আমি এসেছি সেইসব নীরব হয়ে যাওয়া কন্ঠসমূহের ভার নিয়ে।”

অবশেষে, মিস চাকমা এই বলে তার বক্তব্য শেষ করেন যে, “আমি শ্রদ্ধার সাথে স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউরকে অনুরোধ জানাই, আনুষ্ঠানিক সফরের জন্য আপনি বাংলাদেশকে অনুরোধ জানান। আমি এক্সপার্ট মেকানিজম ও স্থায়ী ফোরামকে এই অবস্থান গ্রহণ করতে অনুরোধ জানাই: পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অস্থায়ী ক্যাম্প সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত এবং অপারেশন উত্তোরণ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ স্থগিতকরণের সুপারিশ করা হোক। ন্যায়বিচার বাছাই করার বিষয় নয়। শান্তি রক্ষা অবশ্যই নিজের দেশেই শুরু করতে হবে।”

More From Author