উন্নয়ন বঞ্চিত মধুপুরের গারো জনপথ

0
1042
ছবি: ইত্তেফাক

হিল ভয়েস, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, টাঙ্গাইল: রাত ১২টায় প্রসব বেদনায় কাতরাতে থাকেন জালাবাদা গ্রামের গারো গৃহবধূ ইভা সাংমা। মধুপুর উপজেলা সদর থেকে জালাবাদার দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। এর আট কিলোমিটার শুধু কাঁচাই নয়, গজারি বনের ফাঁক গলানো পায়ে হাঁটা পথ। এমন দুর্গম রাস্তায় সাইকেলে বসিয়ে উপজেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে নির্জন বনে সন্তান প্রসব করেন ইভা।

কাঁধে বহন করা মুমূর্ষু রোগীরা প্রায়ই বিনা চিকিৎসায় প্রায়ই প্রাণ হারায়। মধুপুর গড়ের পাহাড়িদের এমন নিদারুণ ভোগান্তির বিবরণ দিচ্ছিলেন জালাবাদার এনজিও কর্মী লরেন্স নকরেক। জালাবাদার পশ্চিমে চুনিয়া, জয়নাগাছা, বন্দরিয়া, কেজাই, বেদুরিয়া, কাঁকড়াগুণি, সাধুপাড়া, পোনামারি, হরিণধরা এবং পূর্বে সাতারিয়া, চানপুর ও বিজয়পুর গ্রামে গারোদের বাস।

শোলাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ভিক্সন নকরেক জানান, এসব গ্রাম টাঙ্গাইলের মধুপুর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এবং জামালপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় মানুষ উন্নয়নবঞ্চিত। টাঙ্গাইল বন বিভাগ এখানে সড়ক নির্মাণে বাধা দেওয়ায় যোগাযোগসহ শিক্ষাদীক্ষা ও ডিজিটাল প্রযুক্তিবঞ্চিত মানুষ মধ্যযুগীয় জীবনযাপন করেন।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, টেলকি-বেদুরিয়া রাস্তা বন বিভাগের বাধায় পাকা হয়নি। বিকল্প হিসাবে চুনিয়া থেকে সাধুপাড়া-জালাবাদা হয়ে মুক্তাগাছার বিজয়পুর ১২ কিলোমিটার পাকা হলেও চলত। কিন্তু বন বিভাগ সেখানেও বাধা দিচ্ছে। বনে যে বনবাসী গারোরাও বসবাস করে বন বিভাগ সেটি ভুলে গেছে।

লেবু ব্যবসায়ী আনিস জানান, মুক্তাগাছা উপজেলা এলজিইডি চানপুরে বানার নদীতে ব্রিজ এবং গাবতলী-চানপুর দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাও করেছে। এ অংশের সঙ্গে মধুপুর উপজেলার ঐ অংশের কানেক্টিভিটি হলে ময়মনসিংহ ও ঢাকা যাওয়ার বিকল্প যোগাযোগ চালু হতো।

মিশন স্কুলের শিক্ষক নীতিলা চিরান জানান, এখানে লেখাপড়ার ভরসা মিশন স্কুল। কিন্তু বর্ষাকালে রাস্তার দুরবস্থায় টানা তিন মাস শিশুদের স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ থাকে।

বেদুরিয়ার দুলাল খুবি জানান, নাজুক পরিবহন ব্যবস্থার দরুন ৫ হাজার একরে আবাদ হওয়া আনারস, কলা ও লেবু খেতেই বিনষ্ট হয়। গারো নারী উদ্যোক্তা মুনমুন নকরেক জানান, এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক না মেলায় করোনায় বাড়ি ফেরা গারো শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস ফলো করতে পারছে না।

শোলাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার হোসেন জানান, যোগাযোগে দুরবস্থা নিরসনে এলজিইডি ‘টাঙ্গাইল প্রকল্পে’ এর আওতায় ১০ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

টাঙ্গাইল প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা মিজানুর রহমান জানান, বন বিভাগ মানুষের দুর্ভোগ বিবেচনায় না নেওয়ায় রাস্তা নির্মাণে অনাপত্তিপত্র মিলছে না। ফলে বাজেট থাকা সত্ত্বেও সড়ক পাকাকরণ হচ্ছে না। টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহিরুল হক জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া বন বিভাগের জমিতে অন্য কোনো সরকারি সংস্থা রাস্তা নির্মাণ করতে পারে না। সরকার বাজেট দিলে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে এসব সড়ক পাকাকরণ হতে পারে।

সূত্র: ইত্তেফাক