হিল ভয়েস, ২৫ জুন ২০২২, রাঙ্গামাটি: আজ (২৫ জুন ২০২২) সেনা-মদদপুষ্ট প্রচার মাধ্যম হিসেবে পরিচিত পার্বত্যনিউজ.কম সহ বিভিন্ন অনলাইন প্রচার মাধ্যমে রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে জেএসএস-এমএলপি (মগ পার্টি) বন্দুকযুদ্ধে জেএসএস সামরিক কম্যান্ডার লে. সুজন চাকমা নিহত হয়েছে বলে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। হিল ভয়েস-এর সরেজমিন তদন্তে জেএসএস’কে জড়িত করে যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভূয়া ও বানোয়াট বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
উক্ত সংঘাত বা হত্যাকান্ডের ঘটনাটি প্রকৃতপক্ষে এমএলপি বা মগ পার্টির মধ্যেকার একটি ঘটনা বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীর একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।
পার্বত্যনিউজ.কম-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ওগারি পাড়ায় জেএসএস সন্তু ও মগ লিবারেশন আর্মির সন্ত্রাসীদের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে জেএসএস (সন্তু লারমা) দলের সামরিক কম্যান্ডার লে. অভিষেক ওরফে সুজন চাকমা ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয়রা।..শুক্রবার (২৪ জুন) রাতে সাড়ে ৯ ঘটিকায় দুই গ্রুপের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।’ ‘পাহাড়ের খবর’ নামে অনলাইন মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্থানীয় সূত্র বলছে মূল জেএসএস ও মগ পার্টির মধ্যে এ গোলাগুলি হয়। বর্তমানে দুটো দলই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।’
এছাড়াও আলোকিত রাঙ্গামাটি, হিলরসংবাদ সহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমেও অনুরূপ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।
উক্ত বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ওগারি পাড়ার গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ‘ওগারি পাড়ায় মগ পার্টির সদস্যদের কোনো প্রকার আনাগোনা ও সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। তাছাড়া ওগারি পাড়ায় এ ধরনের কোনো যুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি এবং গোলাগুলির শব্দও শোনা যায়নি। যুদ্ধ হওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এদিকে গাইন্দ্যা ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুরুব্বি জানান, ‘গোলাগুলির ঘটনাটি ঘটেছে আসলে গাইন্দ্যা ইউনিয়নের গামারি বাগান এলাকায়। এই এলাকাটি ওগারি পাড়া থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবে মগ পার্টির ঘাঁটি এলাকা হিসেবে পরিচিত পোয়াইতু পাড়া থেকে বেশি দূরে নয়।’
তিনি আরও জানান, ‘আমি খোঁজ নিয়ে যতটুকু জেনেছি এটা মগ পার্টির নিজেদের মধ্যেকার ঘটনা। তারা নাকি এক মারমা যুবককে হত্যা করেছে।’
অপরদিকে পোয়াইতু পাড়ার একাধিক গ্রামবাসী জানান, ‘ইদানিং মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের একটি দল সেনাবাহিনীর ন্যায় ডোরাকাটা পোশাক পরে এবং আরেকটি দল সবুজ রঙের পোশাক পরেই ঘোরাফেরা করেন।’ তারা বলেন, ‘এই দুই ধরনের দল টহলে বের হয়ে একে অপরের সাথে বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং তাদের মধ্যে একজন মারা যায়।’
গ্রামবাসীদের ধারণা, হয় তারা রাতে একে অপরকে চিনতে না পেরে এই বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হন, নয়তো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা অবিশ্বাসের কারণেই তারা এক যুবককে মেরে ফেলে সেটা জেএসএস’র সদস্য বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
উক্ত সংবাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জেএসএস নেতা জানান, ‘জেএসএস এর সাথে যুদ্ধ, যুদ্ধে জেএসএস সামরিক কম্যান্ডার লে. সুজন চাকমা নিহত হওয়ার সংবাদ এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া প্রচারণা। সেনাবাহিনীর দিকনির্দেশনায়ই এসব হচ্ছে।’ তিনি বলেন, মগ পার্টির নিজেদের গুলিতে নিহত এক মারমা ছেলেকে জেএসএস’র সুজন চাকমা বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা নির্লজ্জ ও গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।’
উল্লেখ্য যে, গত ৭ জুন ২০২২ তারিখও পার্বত্যনিউজ-এ অনুরূপ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কাহিনী ভিত্তিক একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ‘মগ পার্টির হামলায় জেএলএ’র ৩ সন্ত্রাসী নিহত’ শিরোনামের ঐ ভিডিওর লিখিত ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়, “গত ২২ মার্চ ২০২২ রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার পাইন্দং পাড়ায় সন্তু লারমার জেএলএ সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে এমএনপি (মগ পার্টি)’র ৩ সদস্যকে হত্যা করেছিল। শনিবার (৪ জুন ২০২২) সকালে কাপ্তাই রাইখালীর নারানগিরি বড়পাড়ার গভীর জঙ্গলে জেএলএ’র ৩ সদস্যকে হত্যা করে পূর্বের ঘটনার বদলা নিয়েছে এমএনপি (মগ পার্টি)।”
উক্ত ভিডিওতে মগ পার্টির সদস্যদের কর্তৃক একটি পাহাড়ি এলাকায় গুলি ও চিৎকার করতে করতে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। একটি ছোট ছনের ঘর পুড়িয়ে দিতে দেখা যায়। এছাড়া পুরো ভিডিও জুড়ে পুরনো বিভিন্ন ঘটনার বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কয়েকটি লাশ প্রদর্শন করতে দেখা যায়। ওই লাশের ছবিগুলো জেএসএস সদস্য বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়।
পরে উক্ত ভিডিও’র তথাকথিত বন্দুক যুদ্ধের ব্যাপারে খোঁজ নিলে জানা যায়, উক্ত রাইখালী এলাকায় এ জাতীয় কোনো প্রকার গোলাগুলি বা বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। সেখানো কারো নিহত হওয়ার খবরও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর নির্দেশে ও পরামর্শেই মগ পার্টির সদস্যরা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এবং নিজেদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়া কর্মীদের চাঙ্গা করার অপকৌশল হিসেবে মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে যুদ্ধের মহড়া করে এবং তা নিজেরাই ভিডিও ধারণ করে। আর সেই ভিডিওটাই সেনামদদপুষ্ট পার্বত্যনিউজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটা করে প্রচার করে।
 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
             
             
                             
                             
                             
                                                     
                                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        