সর্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু করতে হবে- পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ

0
984

হিল ভয়েস, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১২, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) দেশে সর্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু করাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে আদিবাসী জাতিসমূহের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার দাবি জানিয়েছে।

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ সকাল ১০:০০ টায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শহরে মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এইসব দাবি জানানো হয়েছে।

পিসিপি’র কলেজ শাখার সহ-সভাপতি টিকেল চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলেজ শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুনীতি বিকাশ চাকমা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, বিশেষ অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটির সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটির জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানু মারমা, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সোনারিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি শহর শাখা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিলন চাকমা ও নানিয়াচর থানা শাখা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ম্যাকলিন চাকমা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা বলেন, একজন প্রগতিশীল ছাত্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে, উগ্রজাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সেই ১৯৬২ সালের পাকিস্তানি শাসন আমলে যে বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল সেটা এখনো চালু রয়েছে। অথচ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পর যখন ১৯৭২ সালে ১৭ ধারার (খ) তে সর্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু করার কথা থাকলেও বাংলাদেশ সরকার এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি। শিক্ষাকে মুনাফা লাভের হাতিয়ার করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করে বলেন।

আলোচনায় তিনি দেশের বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করে বিজ্ঞানবিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে সকল আদিবাসী জাতিসমূহের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার দাবি জানান।

আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন সেই শহীদদের স্মরণ করে বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের যে শিক্ষা নীতি তা ১৯৬২ সালের তৎকালীন পাকিস্তান শাসন আমলের মত গণবিরোধী শিক্ষানীতি। যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো অনেক নাজুক ও পশ্চাৎপদ অবস্থায় করে রেখে দিয়েছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি না করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লংঘন করে রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে।

আলোচনা সভায় অন্যান্য বক্তারা আরও বলেন, সেই তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আমলে ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট শরীফ কমিশনের প্রণীত শিক্ষানীতি শিক্ষা ধ্বংসের নীতি। স্বাধীন দেশেও পুঁজিবাদী ও বৈষম্যমূলক যে শিক্ষা ব্যবস্থা চলমান আছে তা পরিবর্তন করা দরকার। সেটি পরির্বতনের জন্য ছাত্র সমাজের আন্দোলনের বিকল্প নেই।

বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থা আরো নাজুক অবস্থায় রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ পার্বত্য চুক্তির মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকল জুম্ম জনগণের তাদের শিক্ষা, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসহ সকল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কথা রয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন না করে বরং পার্বত্য চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ৭ (সাত) দফা দাবি সম্বলিত একটি বিবৃতি প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। দাবিসমূহ নিম্নরূপ-
১. সর্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু করতে হবে।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল আদিবাসীদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে।
৩. দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা চালু ও বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত জুম্ম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ‘বৃত্তি’ ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পার্বত্য এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা স্তর থেকে শিক্ষা স্তর পর্যন্ত পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং অবকাঠামো নিশ্চিত করা।
৬. রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান সরকারি কলেজে অর্নাস ও মার্স্টাস কোর্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৭. পার্বত্য অঞ্চলে সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রাবাস চালু করতে হবে।