সংবিধান পরিপন্থী ও অপমানজনক পরিপত্র প্রত্যাহারের দাবি পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির

0
705

হিল ভয়েস, ১ আগস্ট ২০২২, রাঙ্গামাটি: ‘আদিবাসী’ শব্দ নিয়ে ‘সংবিধান সম্মত শব্দ চয়ন’ এর দোহাই দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সংবিধান বিরোধী ও অপমানজনক পরিপত্র অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি। সংগঠনের সভাপতি গৌতম দেওয়ান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের বরাতে ১৯ জুলাই ২০২২ খ্রি: তারিখে তথ্য মন্ত্রণালয় ‘সংবিধান সম্মত শব্দ চয়ন প্রসঙ্গে’ শীর্ষক একটি পরিপত্র জারি করেছে। উক্ত পরিপত্রে আসন্ন ৯ আগস্ট, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টকশো’তে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা’র দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা মনেকরি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র সংবিধান পরিপন্থী এবং দেশের মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক সমাজ তথা সমস্ত আদিবাসী জনগণের জন্য চরম অপমানজনক। আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ শব্দগুচ্ছ সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ বলে তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশে রাষ্ট্রের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু টকশো বা অন্য কোনো মিডিয়ায় বা আলোচনায় ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না – এমন বিধিনিষেধ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ বা দেশের অন্য কোনো আইনে বলা নেই। বরং তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র জারির মাধ্যমে সংবিধান স্বীকৃত বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে।”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ। এই বৈচিত্র্যকে ধারণ করে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মানজনকভাবে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছি। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর সময় এই বিষয়ে যথাযথভাবে মীমাংসার সুযোগ থাকলেও আদিবাসীদের দাবি উপেক্ষা করে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ শব্দগুচ্ছ সন্নিবেশ করা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী একটি অপমাণজনক শব্দ। ‘ক্ষুদ্র’ বলার মধ্য দিয়ে সেই জাতিগোষ্ঠীর লোকজনকে চরমভাবে হেয় করার সামিল যা সংবিধান পরিপন্থী। সংখ্যায় কম হোক কিংবা বেশি হোক, কোনো জাতিগোষ্ঠী কখনো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ হিসেবে পরিচিত হতে পারে না। কোনো জাতিগোষ্ঠী কী নামে পরিচিত হতে চায়, সেটা আইন দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। আত্ম-পরিচিতিই (Self-identification) যেকোনো জাতিগোষ্ঠী পরিচিতি নির্ধারণের মানদন্ড।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই সংবিধান পরিপন্থী ও অপমানজনক পরিপত্র প্রত্যাহার এবং একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বহুত্ববাদের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষে দেশের আদিবাসীদের মর্যাদাপূর্ণভাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানায়।