লংগদুতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্ম গ্রামবাসীর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা

হিল ভয়েস, ১৭ জুলাই ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলার ৩নং গুলশাখালী ও ৪নং বগাচতর ইউনিয়নে পাশাপাশি অবস্থিত দুই গ্রামের ৪ জুম্ম গ্রামবাসীর ভূমি পার্শ্ববর্তী এক প্রভাবশালী সেটেলার বাঙালি কর্তৃক বেদখলের চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ভূমি বেদখলের সাথে স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বেদখলের চেষ্টাকারী ওই সেটেলার বাঙালির নাম মোঃ আব্দুল হালিম (৫০)। তিনি গুলশাখালী সেটেলার বসতি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ৩৮৬নং গুলশাখালী মৌজার হেডম্যান বলেও জানা গেছে। একসময় গুলশাখালী ফরেস্টকে ডি-ফরেস্ট করা হলে সেই এলাকায় রাঙ্গামাটি ডিসির (ডেপুটি কমিশনার) মাধ্যমে ৩৮৬নং গুলশাখালী মৌজা সৃষ্টি করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুলাই ২০২৫ মোঃ আব্দুল হালিম ১০/১২ জনের সেটেলার বাঙালিদের একটি দল নিয়ে প্রথম ৩নং গুলশাখালী ও ৪নং বগাচতর ইউনিয়নের অন্তর্গত ৩৮৮নং রাঙ্গীপাড়া মৌজার রাঙ্গীপাড়া গ্রাম ও নোয়াপাড়া গ্রামের ৪ জুম্ম গ্রামবাসীর ভোগদখলকৃত জায়গা জবরদখল করার উদ্দেশ্যে জঙ্গল পরিষ্কার শুরু করে। এসময় জায়গার মালিক জুম্মরা জঙ্গল পরিষ্কার করতে বাধা প্রদান করলে, মোঃ আব্দুল হালিম ঐ জায়গায় বাগান করার জন্য তিনি ৩৭ বিজিবি, রাজনগর জোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লীজ নিয়েছেন বলে দাবি করেন।

মোঃ আব্দুল হালিম এসময় গ্রামবাসীরা বাগান করতে বাধা দিয়ে বিজিবি সদস্যরা তাদের ধরে নিয়ে যাবে এবং মামলা দায়ের করবে বলেও হুমকি প্রদান করেন। এতে জায়গার মালিকরা অসহায় হয়ে পড়েন।

উক্ত ঘটনার পর জায়গার মালিকগণ পার্শ্ববর্তী ৩৭ বিজিবি, রাজনগর জোন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে তাদের ভূমি রক্ষার দাবি জানালেও বিজিবি কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, বারংবার বাধা প্রদান সত্ত্বেও গতকাল (১৬ জুলাই) পর্যন্ত সেটেলার বাঙালিরা জুম্মদের জায়গায় জঙ্গল পরিষ্কার করছে বলে গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা যায়।

ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা হলেন- ৪নং বগাচতর ইউনিয়নের বাসিন্দা গুনসিন্দু চাকমা (৪৫), পিতা-বীরসিংহ চাকমা, গ্রাম-নোয়াপাড়া ও অমীয় কান্তি চাকমা (৬১), পিতা-বীরেন্দ্র চাকমা, গ্রাম-রাঙ্গীপাড়া এবং ৩নং গুলশাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা রিকেন চাকমা (৪০), পিতা- মন মোহন কার্বারি, গ্রাম- হাজাপেরা ও নেলশন চাকমা (৪২), পিতা- রনজিত চাকমা, গ্রাম- হাজাপেরা।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্বে বিজিবি, রাজনগর জোন কর্তৃপক্ষ ৩নং গুলশাখালী ইউনিয়নের রিকেন চাকমা ও নেলশন চাকমা জায়গার একাংশ বেদখল করে ‘৮নং চেকপোস্ট’ এবং গুণসিন্দু চাকমা ও অমিয় কান্তি চাকমা জায়গার একাংশ বেদখল করে ‘৭নং চেকপোস্ট’ স্থাপন করে। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর চুক্তি অনুযায়ী উক্ত চেকপোস্টগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও, পরে এক পর্যায়ে বিজিবি কর্তৃপক্ষ চুক্তি লংঘন করে ওই চেকপোস্টের স্থানে ‘নিরাপত্তা বাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্প, উক্ত স্থানে কোন প্রকার চাষাবাদ, স্থাপনা নির্মাণ বা বসতি স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষেধ। আদেশক্রমে-রাজানগর জোন’ উল্লেখ করে ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ শীর্ষক সাইনবোর্ড স্থাপন করে।

তবে চেকপোস্টের জন্য বেদখলকৃত জায়গা ব্যতীত বাকী অংশটি মালিকগণ নিজেদের স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণে রেখে দীর্ঘ বছর যাবৎ ভোগদখল করে আসছে এবং ঝাড়ুফুল ও ফলজ বাগান সৃষ্টি করেছেন। এখন উল্লেখিত চেকপোস্টের নির্ধারিত জায়গা লীজ নেওয়ার নাম করে চেকপোস্টের আশেপাশের সমস্ত জায়গা জবরদখল করার জন্য সেটেলার হেডম্যান মোঃ আব্দুল হালিম পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে জায়গার জুম্ম মালিকগণ ও এলাকাবাসীর সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উক্ত এলাকায় গুনসিন্দু চাকমার জমির পরিমাণ ১.৫ একর, অমীয় কান্তি চাকমার জমির পরিমাণ ০.৩০ একর, রিকেন চাকমার জমির পরিমাণ ১.০০ একর এবং নেলশন চাকমার জমির পরিমাণ ০.৬০ একর বলে জানা গেছে।

More From Author