বরকলে শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে পিসিপির ছাত্র ও জনসমাবেশ

হিল ভয়েস, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), বরকল থানা শাখার উদ্যোগে দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% শিক্ষা কোটা চালু করা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে বরকল উপজেলা মাঠে এক ছাত্র ও জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

পিসিপি, বরকল থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক সবিনয় চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বরকল থানা শাখার সভাপতি মিন্টু চাকমা।

ছাত্র ও জনসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চাকমা। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরকল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শ্যামরতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অমিতাভ তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্য জাই চাক, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ম্রানুচিং মারমা, পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপির বরকল থানা শাখার সহ-সভাপতি ইলেন চাকমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন, পৃথিবীতে যত ধরনের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে, যত ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলোতে নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণ ছাত্র ও যুব সমাজ। আজকে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে বাধা, যে প্রতিকূলতা, সেগুলোকে অতিক্রম করে জুম্ম জনগণকে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে আজকের ছাত্র ও জনসমাবেশ। পিসিপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জুম্ম জনগণকে শিক্ষা-দীক্ষায় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখে চলেছে।

তিনি বলেন, শিক্ষকেরা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাক্ষর ছাড়া বেতন তুলতে পারেন না। যে শিক্ষকরা স্কুলে ক্লাস করেন না, স্কুলে যান না, যারা শিক্ষকতার মহান পেশাকে বর্গা দেন, সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে বেতন বন্ধ করে দিতে হবে। তার পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে তদারকি করতে হবে। প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, জুম্ম জনগণ তথা এদেশের আদিবাসী জনগণকে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হলে সরকারকে অবশ্যই ৫% কোটা নিশ্চিত করতে হবে। জুম্ম জনগণকে পেছনে ফেলে এই রাষ্ট্র কখনো উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা করুণ থেকে করুণ হচ্ছে।

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো ভঙ্গুর হতে চলেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেহাল অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক দিয়ে একটা অনার্স কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। দূর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী জেলা পরিষদকে কার্যকর না করার ফলে এসব হচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারকে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সামরিকায়ন দিয়ে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হবে না।

More From Author