পিসিপি চবি শাখার উদ্যোগে শহীদ মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

0
949

হিল ভয়েস, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, চবি প্রতিনিধি: 

গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখার উদ্যোগে চবিতে অধ্যয়নরত সমতল ও পাহাড়ি আদিবাসী ছাত্রদের নিয়ে শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চবি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিসিপি চবি শাখার সভাপতি মিন্টু চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কৃতি চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবির প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: সাইদুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মংয়ই চিং মারমা, পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ চাকমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস’ ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি নয়ন ত্রিপুরা প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শহীদ মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৯ এর আহ্বায়ক ও পিসিপি চবি শাখার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রুমেন চাকমা।

টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় ইনক্রেডিবল (২০১৭-১৮ সেশন) ও ইভার গ্রীন (১৩-১৪ সেশন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ইনক্রেডিবলের অধিনায়ক মংচাইসা মারমার একমাত্র গোলে ইভারগ্রীনকে পরাজিত করে ইনক্রেডিবল টানা দ্বিতীয় বারের মত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও মেডেল এবং রানারআপ দলকে রানারআপ ট্রফি ও মেডেল তুলে দেন অতিথিরা। এছাড়া টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ইভারগ্রীনের খেলোয়াড় টমি ত্রিপুরা, সেরা গোলদাতা নির্বাচিত হন ইভারগ্রীন এর স্ট্রাইকার থোয়াইচিংনু মারমা, সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হন ইনক্রেডিবল এর গোলকিপার সুশোভন দেওয়ান এবং ম্যান অফ দ্যা ফাইনাল নির্বাচিত হন ইনক্রেডিবল এর খেলোয়াড় প্রেনচ্যুং ম্রো।

উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মো: সাইদুল ইসলাম বলেন, জীবনকে সুন্দর ও মানসিকভাবে গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য সবাইকে অবশ্যই নিজেকে খেলাধুলার মধ্যে রাখতে হবে। তার সাথে আমাদেরকে উদার মন-মানসিকতার অধিকারী হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে বলে তিনি খেলোয়াড় ও শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন। কারণ একজন শিক্ষিত মানুষ দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, আজকের এই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে একমাত্র সচেতন ছাত্র ও যুব সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তার পাশাপাশি ছাত্রসমাজকে দেশ ও জাতির জন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বক্তারা বলেন, এই টুর্নামেন্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনা ও মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়া এবং শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা সম্পর্কে জানা। পাশাপাশি তার আত্মত্যাগকে অনুসরণ করে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র ও যুব সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সর্বদা প্রস্তুত থাকা।

বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের শেকড়। সেই শেকড়ে আজ অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। সেই বিরাজমান অস্থিতিশীলতা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য ছাত্রসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তাই সবাইকে জনসংহতি সমিতি এবং পিসিপির সাথে সামিল হয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হতে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য বক্তারা অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, শহীদ মংচসিং মারমা পিসিপি কাপ্তাই সুইডিস পলিটেকনিক শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০১২ সালের ২০শে মে পিসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ শেষে কাপ্তাইয়ে ফেরার জন্য রাঙ্গামাটির কল্যাণপুরস্থ পেট্রোল পাম্পে সহকর্মী ও বন্ধুদের অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ অপেক্ষামান বাসের পাশ ঘেষে আসা একটি চলমান সিএনজি গতি কমিয়ে কিছু সন্ত্রাসী সেখানে পরিকল্পিতভাবে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। সেই গ্রেনেড হামলায় তিনিসহ ৬ জন মারাত্মকভাবে আহত হন। ঘটনার পরপরই তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ঘটনার তিনদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেন।

পিসিপি চবি শাখা শহীদ মংচসিং মারমার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর শহীদ মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে চবিতে অধ্যয়নরত সমতল ও পাহাড়ি আদিবাসীদের সেশন ভিত্তিক ১১টি দলের অংশগ্রহণে শহীদ মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৯ শুরু করা হয় এবং গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ফাইনাল খেলার মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্ট সমাপ্তি হয়।