দেশের বৃহৎ স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভুমি সমস্যাসহ সকল সমস্যা সমাধানের দাবি

হিল ভয়েস, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ঢাকা: আজ ১৮ আগষ্ট ২০২৫ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি শফিকুল কবির মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এর আয়োজনে ‘পাহাড়ের ভূমি সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ভূমি কমিশনকে সক্রিয়করণ’-শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক এএলআরডি, এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, গণফোরাম, রুহীন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি), বজরুল রশিদ ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), সাইফুল হক, সাধারণ সম্পাদক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং শহিদ উদ্দিন স্বপন, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রমুখ।

মতবিনিময় সভার শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন।

শামসুল হুদা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতে প্রতিশ্রুতির কথা থাকলেও আজকে এক বছরেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। ২০১৬ সালে বিগত সরকারের আমলে কাঠখড় পুড়িয়ে ভুমি কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ভুমি কমিশন কয়েকটি গোষ্ঠীর কারণে কাজ করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। উপরন্তু ভুমি কমিশনের কাজকর্মে ও তার বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অনেক নাটক আমরা দেখতে পাচ্ছি। পার্বত্য চুক্তি কোনো সরকার বাতিল করতে পারবে না, কারণ এই চুক্তিটির জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যান্ডেট রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পরবর্তী সময়ে ছাত্ররা সারা দেশে যেসব গ্রাফিতি অংকন করেছিলেন সেখানে দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছিল। সেসকল বৈষম্য নিরসনে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বিশেষ করে আদিবাসী, ভুমিহীন মানুষ, সংখ্যালঘুদের বেলায় ১ বছরেও তার কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম দিয়ে যে সীমান্ত সড়ক করা হয়েছে তা পাহাড়ি আদিবাসীদের চাষাবাদ ভুমি নষ্ট করে, কিছু জায়গা থেকে তাদের উচ্ছেদ করে করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে নামে পাহাড়ে যে সকল ভুমি দখল করা হচ্ছে তা অচিরেই বন্ধ করতে হবে। সর্বশেষ তিনি, রাষ্ট্রের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে চুক্তি করা হয়েছে সেই চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।

বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ১৯৯৭ সালে যে চুক্তি করা হয়েছে তা ২৭ বছরেও কোনো সরকার বাস্তবায়ন করেনি। পাহাড়ে ভুমি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য যে ভুমি কমিশন গঠন করা হয়েছে এপর্যন্ত ৫ জন চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হলেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। কমিশন যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে আলোচনার জন্য যেতে চায় তখনি সেখানকার সেটেলাররা তাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যে ঐক্যমত্য কমিশন হয়েছে তারা অনেক দল-গোষ্ঠীর সাথে আলোচনায় বসলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য যে দলের সাথে চুক্তি করা হয়েছিল সেই দলের সাথে কোনো আলোচনা আমরা দেখতে পাইনি।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার অন্যতম হচ্ছে ভুমি সমস্যা। আমাদের দেশে অনেক আইন হয় বিধিমালা হয় কিন্ত সেগুলো কখনো বাস্তবায়ন হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুমি সমস্যা সমাধান ব্যতীত সেখানকার অধিবাসীদের সমস্যাকে সমাধান করা যাবে না। পার্বত্য চুক্তি নিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার আগে আগ্রহ দেখালেও ক্ষমতা যাওয়ার পরে সে আগ্রহ আর থাকে না। আমি দেখতে পাই, একটি স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠীর কারণে পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি বাদ দেওয়া হয়।

তিনি তার সর্বশেষ বক্তব্যে, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুমি সমস্যা সমাধান ও সকল সমস্যা সমাধানের জন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি তুলেন।

সাইফুল হক তর বক্তব্যে বলেন, আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স ১বছর হয়ে গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান ভুমি সমস্যাসহ কোনো সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন হয়নি বরং সেখানে ভূমি দখল, অধিকতর সেনাশাসন জারি, নারী নির্যাতন বেড়েছে। তাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আজকে পাহাড়ে যেসকল ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে সে-সকল ঘটনার বেশিরভাগ মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ডেমোগ্রাফিক চিত্র পাল্টে দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে সেখানে সেটেলারদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তারা আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৭ সালে সাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি পর্যালোচনায় এনে তার যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

নাজমুল হক প্রধান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে যারা স্থায়ীভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে আসছে তাদের বৈষম্য দৃষ্টিতে দেখা হয় যার কারণে কোনো সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে সমাধান করেনি।পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে সামরিক শাসন দীর্ঘ করা হচ্ছে তার অবশ্যই ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামপর সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য, সেখানে পুনর্বাসিত সেটেলার বাঙালিদের তালিকা প্রকাশ করে অন্যত্র পুর্নবাসন করা এবং সেখানকার ভুমি সমস্যা সমাধানের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে উক্ত সভা সঞ্চালনা করেন দীপায়ন খীসা।

More From Author

+ There are no comments

Add yours