ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি’র পঞ্চম সভা অনুষ্ঠিত

0
897

হিল ভয়েস, ৯ ডিসেম্বর ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির পঞ্চম বৈঠক হয়েছে গত ৭ ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ সকাল ১১.৩০ ঘটিকায়। কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, এমপি-এর সভাপতিত্বে উক্ত সভায় কমিটির অপর দুই সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এবং ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং উপস্থিত ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগমসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ১৬ জুন ২০১৯ চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির চতুর্থ সভার প্রায় আড়াই বছর পর পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

বিগত সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন, বিগত সভার সিদ্ধান্তবলী বাস্তবায়ন, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বিষয় হস্তান্তর, অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন, আদা-হলুদসহ জুম চাষ বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের জনবিরোধী নির্দেশনা, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের রাঙ্গামাটি সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ, জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে ডেপুটি কমিশনারদের অন্তর্ভুক্তিকরণে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের বিধি-বহির্ভুত নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয়ে সভায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

পার্বত্য ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়নে অধিকতর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। অপরদিকে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বিষয় হস্তান্তর, অনতিবিলম্বে অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, ‘পুলিশ (স্থানীয়)’ বিষয়টি নিকট নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর ও আইন মোতাবেক পার্বত্য জেলা পুলিশ বাহিনী গঠন করা, জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন বাস্তবায়ন কমিটির পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও কোন অগ্রগতি সাধিত হয়নি বলে সভায় আলোচনা করা হয়।

পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে ডেপুটি কমিশনারদের অন্তর্ভুক্তিকরণে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাটি বিধি-বহির্ভুত বিধায় তা বাতিল করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রবিধান রয়েছে এবং প্রবিধান অনুসারে পার্বত্য জেলা পরিষদ শিক্ষক নিয়োগ করবে বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক প্রত্যাহারকৃত অস্থায়ী ক্যাম্পের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির নিকট জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও সেনা সদর দপ্তর থেকে কেবল উপজেলা-ভিত্তিক প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্পের সংখ্যা জমা দেয়া হয়। তাই ক্যাম্পের নামসহ প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্পের তালিকা প্রদানের জন্য সভায় সেনা সদর দপ্তরে পত্র প্রেরণের আবারো সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা যায়।

সভায় এক পর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শুরু করার প্রাক-মুহূর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সভায় উপস্থিত হন। এ সময় তিনি পার্বত্য জেলায় নতুন পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরেন।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উক্ত মতামতের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পের স্থলে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলে তা হবে পার্বত্য চুক্তির সরাসরি বরখেলাপ। কমিটির পূর্ববর্তী সভাগুলোকে “পুলিশ (স্থানীয়) বিষয়টি পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের নিকট নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে হস্তান্তর করা এবং আইন মোতাবেক পার্বত্য জেলা পুলিশ বাহিনী গঠন করার” সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানান। তদনুসারে তিন পার্বত্য জেলায় পুলিশ বাহিনী গঠন করা অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সন্তু লারমা আদা-হলুদসহ জুম চাষ বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের জনবিরোধী নির্দেশনা এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের রাঙ্গামাটি সফরকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ষড়যন্ত্রমূলক চিঠির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এসব ষড়যন্ত্রমূলক নির্দেশনা শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহও অবাক হন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় এবং এধরনের জনস্বার্থ বিরোধী ও ষড়যন্ত্রমূলক পত্র মন্ত্রণালয়ে হস্তগত হলে ’পরে কোন বিচার-বিবেচনা না করে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট তা সরাসরি ফরওয়ার্ড করে দেয়ার কোন যুক্তিকতা থাকতে পারে না বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

পাহাড়ে হলুদ-আদা চাষ বন্ধে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের জনস্বার্থ-বিরোধী নির্দেশনা
ডেনমার্ক রাষ্ট্রদূতের রাঙ্গামাটি সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ

১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির কার্যকারিতা বিরুদ্ধে একটি মহলের ষড়যন্ত্র বিষয়ে সন্তু লারমা সভায় তুলে ধরেন। উল্লেখ্য যে, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি একটি মৃত আইন নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত আইন মর্মে হাই কোর্টের বিচারপতি এস কে সিনহার রায়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল আপীল বিভাগে আপিল আবেদন করে। এ বিষয়ে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি কার্যকারিতার পক্ষে সরকারের তরফ থেকে আইনগতভাবে মোকাবেলা করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০ কার্যকর রাখতে হবে’: ২৭ বিশিষ্টজনের বিবৃতি

জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের জন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং টাস্ক ফোর্সে পদ সৃজন ও শুন্য পদ পূরণ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের বিধিমালা প্রণয়নে বিধি-বহির্ভুতভাবে এসআরও নম্বর বসানোর নির্দেশনার ফলে সৃষ্ট জটিলতা বিষয়ে কমিটির তৃতীয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য সভায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।