জুম্ম অধিকারকর্মীদের অপরাধীকরণ বন্ধ ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট ৫ জুম্ম সংগঠনের আবেদন

0
867

হিল ভয়েস, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, কানাডা:  ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচ প্রবাসী আদিবাসী জুম্ম সংগঠন, যেমন- সিএইচটি ইন্ডিজেনাস পিপলস কাউন্সিল অব কানাডা, ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিজেনাস পিপলস অব সিএইচটি, ফ্রান্সের ইউরোপিয়ান জুম্ম ইন্ডিজেনাস কাউন্সিল, আগরতলা থেকে চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া, নিউইয়র্ক থেকে আমেরিকান জুম্ম কাউন্সিল পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী অধিকারকর্মীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিতকরণ বন্ধ এবং পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট একটি জরুরী আবেদন পেশ করে।

জুম্ম সমাজের সংগঠনসমূহ গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি (সংক্ষেপে ‘পার্বত্য চুক্তি) স্বাক্ষরের পর ২১ বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও, চুক্তির মূল বিষয়সমূহ অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। ফলে শান্তি, উন্নয়ন, বেসামরিকীকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের মাধ্যমে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব এবং অঞ্চলের সুশাসনের ক্ষেত্রে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততার বিষয়ে এখনও অর্থপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়িত মূল বিষয়সমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন- পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসী অধ্যুষিত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ; পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের এখতিয়ারের আওতায় থাকা সকল বিষয় ও কর্মসমূহের হস্তান্তর, যেমন- সাধারণ প্রশাসন, আইন ও শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি এবং তাদের কার্যকারিতা; পরিষদসমূহের নির্বাচন বিধিমালা ও ভোটার তালিকা বিধিমালা প্রণয়ন করে এই পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিতকরণ; পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ; অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ব্যক্তি ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের, তাদের বেদখলকৃত ভূমি তাদের সঠিক মালিকানায় ফেরতদানসহ, তাদের স্ব স্ব বসতবাড়িতে পুনর্বাসন করা; কার্যত সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা; অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি লীজসমূহ বাতিলকরণ; পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান সকল চাকুরিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগকরণ; পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালা ১৯০০, বাংলাদেশ পুলিশ আইন ১৮৬১ ও পুলিশ বিধিমালাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য সকল আইনসমূহ চুক্তির আলোকে সংশোধন করা; যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সাথে বাঙালি মুসলিম সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পুনর্বাসন করা।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সম্পূর্ণ বিচারহীনভাবে সামরিক ও আইন-প্রয়োগকারী বাহিনীর দ্বারা সুপরিকল্পিত মানবাধিকার লংঘন পূর্বের মতই অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি সরকার ও সামরিক বাহিনী কর্তৃক সন্ত্রাসী, সশস্ত্র অপরাধী, চাঁদাবাজ, বিচ্ছিন্নতাবাদী ইত্যাদি আখ্যায়িত করে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি আনয়নের জন্য আন্দোলনে যুক্ত পিসিজেএসএস ও ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) এর সদস্য ও সমর্থকদেরসহ আদিবাসী অধিকারকর্মীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিতকরণ ভয়াভহভাবে জোরদার করা হয়েছে। যার ফল ডেকে এনেছে একতরফা গ্রেফতার, তথাকথিত ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, জোরপূর্বক নিখোঁজ, আটক ও ভয়ভীতি প্রদর্শন। সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নামে, সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ অব্যাহতভাবে বাড়ি তল্লাশী, মধ্যরাতে আদিবাসী গ্রামবাসীদের জাগিয়ে অস্ত্র গুজে দিয়ে একতরফা গ্রেফতার, নৃশংস শারীরিক আক্রমণ ও হয়রানি, আদিবাসী নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, আদিবাসী অধিকারকর্মী যারা জামিনে মুক্ত হচ্ছে তাদেরকে গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বাহিনী কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে ধরে সেনাক্যাস্পে নিয়ে গিয়ে সেখানে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং তাদেরকে নতুনভাবে অন্য সাজানো মামলায় জড়িত করে জেলে পাঠানো হচ্ছে এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামে নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন সম্প্রতি সমতল জেলায় এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছে। তারা নিম্নোক্ত কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন-

১. গত ১৪ মার্চ ২০১৯ র‌্যাব (র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) কর্তৃক পিসিজেএসএস’র রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন বালুখালি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি মি: মায়াধন চাকমা ও এক ঠিকাদার মি: জ্ঞান শংকর চাকমাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৩ এপ্রিল ২০১৯ র‌্যাব-৭ এর কম্যান্ডিং অফিসার লে: কর্ণেল মিফতাহ্ উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব কর্তৃক বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে তথাকথিত এক ক্রসফায়ারে জ্ঞান শংকর চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অপরদিকে মায়াধন চাকমা এখনও নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছে।
. গত ১৫ মে ২০১৯ কাপ্তাই উপজেলার রাইখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পিসিজেএসএস’র রাইখালি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি মি: সায়া মং মারমা এবং কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কাপ্তাই থানা কমিটির সদস্য মি: ক্যইসা অং মারমা উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আগাম জামিন অনুসারে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হলে রাঙ্গামাটির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে। তাদেরকে মিথ্যাভাবে মি: অং সানু মারমা ও মি: জাহিদ হোসেনের হত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। তাদেরকে আবার নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মি: শক্তিমান চাকমার হত্যাকান্ডের জন্য মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত করে উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত জামিন অনুযায়ী রাঙ্গামাটি জেল থেকে বের হওয়ার আগেই গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ গ্রেফতার দেখানো হয়।
৩. গত ২৫ মে ২০১৯ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও পিসিজেএসএস এর কেন্দ্রীয় সদস্য মি: কে এস মং মারমা এবং রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও পিসিজেএসএস এর কেন্দ্রীয় সদস্য মি: ক্যবা মং মারমা আমন্ত্রিত হয়ে বান্দরবান সেনা জোনে গেলে বান্দরবান জোনের সেনাবাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার করে। সেখানে দুই ঘন্টা যাবৎ জিজ্ঞাসাবাদের পর, সেনাবাহিনী তাদেরকে একতরফাভাবে গ্রেফতার করে এবং বান্দরবান থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। অপরদিকে, একই সময়ে, কোলাক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান মি: থোয়াইহ্লা প্রু মারমা, হুয়ালং ইউনিয়নের উজিপাড়া গ্রামের কার্বারী (গ্রাম প্রধান) মি: হ্লাচিং মং মারমা ও জর্ডান পাড়া গ্রামের কার্বারী মি: মংহ্লা ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের সবাইকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় এবং মি: চ থুই মং মারমার অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত করে গ্রেফতার দেখানো হয়। উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত জামিন অনুসারে বান্দরবান কারাগার থেকে বের হওয়ার পূর্বেই গত আগস্ট মাসে তাদেরকে আবার অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
৪. গত ৮ আগস্ট ২০১৯ উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর জেল থেকে বের হওয়ার সময় সাদা পোশাকে র‌্যাব-৭ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পিসিজেএসএস এর রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালি থানা শাখার সভাপতি ও ব্যবসায়ী মি: সুভাষ চাকমাকে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক থেকে আটক করে। তখন থেকে মি: সুভাষ চাকমা নিখোঁজ থাকেন। র‌্যাব, পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ তাকে আটক করার কথা অস্বীকার করতে থাকে। অবশেষে, গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ চট্টগ্রামে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, গত ২৪ অক্টোবর ২০১৮ চম্পাতলী সেনা ক্যাম্পের কর্তৃপক্ষের আহ্বানে ক্যাম্পে যাওয়ার পরপরই, চম্পাতলী ক্যাম্পের সেনাবাহিনী সুভাষ চাকমাকে গ্রেফতার করে এবং নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগ তুলে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে।
৫. গত ২৩ আগস্ট ২০১৯ ক্রশফায়ারের নামে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন সাজেক ইউনিয়নে ১২ বীর বেঙ্গলের বাঘাইহাট জোনের সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন মি: শান্তিময় চাকমা নামের এক নিরীহ যুবক। তার অপরাধ হল, তিনি ইউপিডিএফ’র একজন প্রাক্তন সদস্য।
৬. গত ২৫ আগস্ট ২০১৯ কুমিল্লা জেলায় অজ্ঞাত মুসলিম কর্তৃক শ্রীমৎ অমৃতানন্দ ভিক্ষু নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু নিহত হন। এটা সরকারের অন্য ধর্মীয় গুরুদের সুরক্ষা দিতে না পারার ব্যর্থতা।
৭. গত ২৬ আগস্ট ২০১৯ খাগড়াছড়ি জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলার দীঘিনালা জোনের সেনাবাহিনী উপজেলার কৃপাপুর গ্রামের মি: শান্তিময় চাকমার বাড়ি থেকে (১) নবীন জ্যোতি চাকমা, পীং-ধন্যাসেন চাকমা, (২) মি: ভুজেন্দ্র চাকমা, পীং-তুঙ্গ্যারাম চাকমা, (৩) মি: রুসিল চাকমাকে গ্রেফতার করে। এরপর গত ২৭ আগস্ট দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের দীঘিনালার বিনন্দচুক ভাবনা কেন্দ্রের নিকটবর্তী জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারা ইউপিডিএফ এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
৮. গত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর জেল থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ বান্দরবান জেলার বান্দরবান কারাগারের ফটক থেকে থানচি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও পিসিজেএসএস’র থানচি থানা কমিটির সভাপতি মি: চসা থোয়াই মারমাকে গ্রেফতার করে। কারা ফটক থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরপরই, তাকে নতুন এক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাকে প্রথম গ্রেফতার করা হয় ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে, জনৈক মি: ক্যসিং থোয়াই মারমার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে।
৯. গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মো: নুরুল আমিন নামে এক সেটেলার অন্যান্য মুসলিমদের একটি দল নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার আলিকদমে মি: মংখাই মুরুং নামের এক আদিবাসী ব্যক্তির ভূমি বেদখল করতে যায়। স্থানীয় আদিবাসী জনগণ যখন তাদের ভূমি বেদখল বন্ধ করার চেষ্টা করে, তখন মুসলিমদের এই দলটি তাদের উপর হামলা করে। ফলে, মি: মংখাই মুরুং, মি: সক্ষম মুরুং, মি: টং-আ মুরুং, মি: সংজ্ঞা মুরুং ও মি: লাইপাও মুরুং গুরুতরভাবে আহত হয় এবং তাদেরকে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অধিকার সংগঠনসমূহ মত প্রকাশ করেন যে, একতরফা গ্রেফতার, ক্রসফায়ার হত্যাকান্ড, সাজানো মামলা দায়ের ও কারাগারে প্রেরণ পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অনুরূপভাবে, আদিবাসী জনগণের বাড়ি তল্লাশী ও তছনছ করা এবং বাড়িঘরের জিনিসপত্র ওলটপালট করে দেয়া আদিবাসী জনগণের জীবনের এক অংশ দাঁড়িয়েছে। এইসব ঘটনাবলী এই অঞ্চলের পিসিজেএসএস ও ইউপিডিএফ সদস্যসহ আদিবাসী অধিকারকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণে পাঁচ শতাধিক কর্মী গ্রেফতার ও ভয়ভীতিপ্রদর্শন এড়ানোর জন্য তাদের স্ব স্ব এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। দুঃখজনকভাবে, চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বেও আদিবাসী জনগণ কর্তৃক এধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হয়েছিল। এই সমস্ত কাজগুলি আপনার সরকারের ভাবমূর্তি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশী বাহিনীসমূহ কর্তৃক অর্জিত সুনাম ধ্বংস করে চলেছে।

অতএব উপরোক্ত পরিস্থিতির আলোকে, তারা নি¤েœাক্ত বিষয়ের উপর জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট আবেদন জানান:

(ক) পিসিজেএসএস ও ইউপিডিএফ এর সদস্য ও সমর্থকরাসহ আদিবাসী মানবাধিকার রক্ষায় নিয়োজিত কর্মীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিতকরণ বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বিচার সামরিক অভিযান, যা অবৈধভাবে বাড়ি তল্লাশি, একতরফা গ্রেফতার, তথাকথিত ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড, জোরপূর্বক নিখোঁজ, আটক ও ভয়ভীতি প্রদর্শন ডেকে আনে তা বন্ধ করা।
(খ) পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের স্বার্থে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল হতে কার্যত সামরিক শাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’ ও সকল অস্থায়ী ক্যাম্প অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা।
(গ) বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটানো এবং ২০১৩ ও ২০১৮-তে অনুষ্ঠিত মানবাধিকার পরিষদের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ’র অঙ্গীকার অনুযায়ী নারী ও শিশুসহ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন কানাডার সিএইচটি ইন্ডিজেনাস পিপলস কাউন্সিল এর সভাপতি প্রীতি বি চাকমা, ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিজেনাস পিপলস অব সিএইচটি এর সভাপতি আদিত্য কে দেওয়ান, ইউরোপিয়ান জুম্ম ইন্ডিজেনাস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক শাক্য মিত্র চাকমা, চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এর সহ-সাধারণ সম্পাদক শান্তি বি চাকমা ও আমেরিকান জুম্ম কাউন্সিল এর সভাপতি শান্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

আবেদনপত্রের অনুলিপি প্রেরণ করা হয় যাদের বা যার বরাবরে, সেগুলি হল- এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, লন্ডন, যুক্তরাজ্য; সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল, লন্ডন, যুক্তরাজ্য; হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র; জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কমিশন, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড; ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনস, জাতিসংঘ, নিউ ইয়র্ক; ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ব্রাসেলস, বেলজিয়াম; পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার, নিউ দিল্লী; গ্লোভাল এ্যাফেয়ার্স, ওটোয়া, কানাডা; ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিস, লন্ডন, যুক্তরাজ্য; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওসলো, নরওয়ে; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দ্য হেগ, নেদারল্যান্ড; হেড অব কম্যুনিকেশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্টকহোম, সুইডেন; এআইপিপি, চিয়াংমাই, থাইল্যান্ড; ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইন্ডিজেনাস এ্যাফেয়ার্স, কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক; পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন, ঢাকা, বাংলাদেশ; ড. এ কে আবদুল মোমেন, মন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; আসাদুজ্জামান খান, মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, প্রতিমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙ্গামাটি; চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ঢাকা।