ছাত্রনেতা মংচসিং মারমার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পিসিপি’র স্মরণসভা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

0
125

হিল ভয়েস, ২৩মে ২০২৪, রাঙ্গামাটি: গতকাল বুধবার (২২ মে ২০২৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের(পিসিপি) উদ্যোগে ছাত্রনেতা মংচসিং মারমার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠিত হয়। “মংচসিং মারমার রক্ত বৃথা যেতে দেব না” এই স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত স্মরণসভাটি আজ বিকেল ৫:০০ ঘটিকায় শুরু হয়।

স্মরণসভার শুরুতে মংচসিং মারমার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমার সঞ্চালনায় এবং সহ-সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রমুখ।

শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ছাত্রনেতা মংচসিং মারমার মৃত্যু পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা। তিনি ২০১২ সালে চুক্তিবিরোধী সন্ত্রাসী ইউপিডিএফের হামলায়  নিহত হন। অধিকার কর্মীর উপর প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর এরকম বহু হামলার ঘটনা আমরা দেখতে পাই। মংচসিং মারমার আত্মত্যাগ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুগে যুগে স্মরণ করা হবে। তার রক্ত এই ছাত্র সমাজ বৃথা যেতে দেবে না।

অন্তর চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পরবর্তী সময়ে শাসকগোষ্ঠীর চুক্তি বিরোধী ষড়যন্ত্রের ফলে ইউপিডিএফের মতো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উত্থান হয়। এই চুক্তিবিরোধী গোষ্ঠীর নানা অপতৎপরতায় আমরা দেখেছি অধিকার কর্মী মংচসিং মারমার মত অনেক অধিকারকামী মানুষের জীবনহানি হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর মদদে চুক্তি বিরোধী গোষ্ঠীর আমাদের জুম্ম জনগণের আন্দোলন সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করে দেওয়ার পায়তারা প্রতিনিয়ত চলছে। চুক্তি বাস্তবায়নের লড়াই সংগ্রামে শহীদ মংচসিং মারমার মতো আত্মত্যাগকে আমরা বৃথা যেতে দেব না। এজন্য ছাত্রসমাজকে এই প্রতিক্রিয়াশীল চুক্তিবিরোধীগোষ্ঠীকে প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধ  আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে রেং ইয়ং ম্রো বলেন, শাসকগোষ্ঠী চুক্তির পরবর্তী সময়ে পার্বত্য অঞ্চলের  সমস্যাকে আরও জটিলতর করার ষড়যন্ত্রে চুক্তি বিরোধী গোষ্ঠী ইউপিডিএফ’র উত্থান হয়।

তিনি আরও বলেন, জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে বহু তরুণের আত্মত্যাগ মিশে আছে। শহীদ মংচসিং মারমার মৃত্যু পাহাড়ে শাসকগোষ্ঠীর নোংরা রাজনীতির অংশ। জুম্ম ছাত্র সমাজকে এই সহিংস ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিকে প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রসমাজকে দৃপ্ত চিত্তে শপথ নিতে হবে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আয়োজিত স্মরণ সভা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

উল্লেখ্য যে, শহীদ মংচসিং মারমা পিসিপি কাপ্তাই সুইডিস পলিটেকনিক শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০১২ সালের ২০শে মে পিসিপির কেন্দ্রীয় ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ শেষে বাড়িতে  ফেরার জন্য রাঙ্গামাটির কল্যাণপুরস্থ পেট্রোল পাম্পে সহকর্মী ও বন্ধুদের অপেক্ষা করছিলেন। বিকাল ৩:৩০ টার দিকে অপেক্ষমান বাসের পাশ ঘেষে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি চলমান সিএনজি গতি কমিয়ে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা আকস্মিক গ্রেনেড ছুড়ে মেরে দ্রুত চলে যায়। সেই গ্রেনেড হামলায় তিনিসহ ১৩ জন সহযোদ্ধা মারাত্মকভাবে আহত হন। অনেকের হাত, কারোর পা, কারোর শরীর কিংবা কারোর চোখে আঘাত পান এবং মাংস পিন্ড ছিটকে পড়ে।  সহপাঠীরা তাদেরকে দ্রুত রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দুইদিন পর ২২ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মংচসিং মারমা চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।